ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (The great person Ishwar Chandra Vidyasagar)

Ishwar Chandra Vidyasagar: Great man and great personality is Ishwar Chandra Vidyasagar. He is endowed with profound erudition. Ishwar Chandra Vidyasagar was the epitome of greatness and generosity. His mind was full of compassion for the poor, helpless and homeless. So he is at the same time ‘Vidyasagar’ and ‘Dayarsagar’. That is why Rabindranath said about this astrologer who is brilliant in knowledge, service and personality.

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর(Ishwar Chandra Vidyasagar):

শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ তথা মহান ব্যক্তিত্বের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যার কথা মনে পড়ে তিনি হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। মহত্ব ও উদারতার তিনি ছিলেন প্রতিমূর্তি।

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম, বংশপরিচয় এবং শিক্ষা(Ishwar Chandra Vidyasagar’s birth, genealogy and education):

১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়; মাতা ভগবতী দেবী। বিদ্যাসাগর ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। খুব অল্প বয়সেই তিনি গ্রামের পাঠশালায় ভরতি হন এবং পাঠশালার গুরুমশায়ের স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি পিতার সঙ্গে কলকাতা গমন করেন। সেখানে তিনি সংস্কৃত কলেজে ভরতি হন। তখন তিনি ন-বছরের বালক। দারিদ্রতা তিনি জন্মসূত্রে লাভ করেন। তবু সেই দরিদ্রতা কখনােই তার বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়নি। হেলায় তাকে দূরে ঠেলে বিদ্যাসাগর কৃতিত্বের সঙ্গে প্রতি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করতেন। পুরস্কারস্বরূপ তিনি পেতেন বৃত্তি। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ঈশ্বরচন্দ্র লাভ করলেন বিদ্যাসাগর উপাধি। এক কথায় এ সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত ভাষায় অগাধ পাণ্ডিত্য লাভ করেন। শুধু তাই নয়, ইংরেজি ভাষাকেও তিনি তার কঠোর অধ্যাবসায়ের দ্বারা রপ্ত করেছিলেন।

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন(Ishwar Chandra Vidyasagar’s career in Vidyasagar):

ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে বিদ্যাসাগর প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিত হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনাম করেন। পরে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ছেড়ে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে -র অধ্যাপক হিসেবে সংস্কৃত কলেজে যােগ দেন। তার এক বছর পর ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেন। আপসহীন ব্যক্তিত্বের জন্য শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক বছরের মধ্যেই তার মনান্তর ঘটে। ফলে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজ ত্যাগ করেন। এরপরই তিনি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেন মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ক্রমে ক্রমে এই বিদ্যালয়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল দিগবিদিকে। মেট্রোপলিটনের মতাে আরও অনেক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যাসাগর তার জীবনব্যাপী শিক্ষাবিস্তারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যান।

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষানীতি(Ishwar Chandra Vidyasagar’s education policy):

শুধু পুথিগত শিক্ষার মধ্য দিয়ে পণ্ডিত ও জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষার আলােকে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা-এই ছিল বিদ্যাসাগরের শিক্ষানীতি। মাতৃভাষার মাতৃদুগ্ধ পান করে শিক্ষিত হয়ে ওঠার কথা বলেন বিদ্যাসাগর। এ ছাড়া পাঠক্রম থেকে ধর্মীয় তত্ত্বের বিলােপ ঘটানাের পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। শিক্ষার উপযােগিতাকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌছে দেওয়াই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। সেই উদ্দেশ্যে তিনি ২০ টি বাংলা মডেল স্কুল, ৩২ টি বালিকা বিদ্যালয় এবং অবহেলিত মানুষদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজসেবা(Ishwar Chandra Vidyasagar’s social service):

বিদ্যাসাগরের সামাজিক দায়বদ্ধতা ছিল অপরিসীম। তাই শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন জরাজীর্ণ সমাজকেও তিনি বিশুদ্ধতা দানে সচেষ্ট হয়েছিলেন। আজীবন বিদ্যাসাগর সহায়সম্বলহীন মানুষের সেবা করে গেছেন অকুণ্ঠচিত্তে। মাতা ভগবতী দেবীর করুণা মন্ত্রে দীক্ষিত হতে পেরেছিলেন বলেই তিনি করুণার সিন্ধু, দয়ার সাগর। সমাজসেবক বিদ্যাসাগর ও বিদ্যাসাগরের সামাজিক দায়বদ্ধতা ছিল অপরিসীম। তাই শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন জরাজীর্ণ সমাজকেও তিনি বিশুদ্ধতা দানে সচেষ্ট হয়েছিলেন। আজীবন বিদ্যাসাগর সহায়সম্বলহীন মানুষের সেবা করে গেছেন অকুণ্ঠচিত্তে। মাতা বিদ্যাসাগর একই সঙ্গে ছিলেন সমাজসেবক ও সমাজসংস্কারক।

এতদিন সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ধর্মের দোহাই দিয়ে যে মেয়েদের গৃহকোণে বন্দি করে রেখেছিল, তিনি তাদের শিক্ষার আলােকে নিয়ে আসেন। সমাজ থেকে বাল্যবিবাহের মতাে দুষ্ট ব্যাধি দূর করতে তাকে অনেক শ্রম স্বীকার করতে হয়েছিল। কৌলীন্যপ্রথা ও বাল্যবিবাহের দৌলতে তৎকালে ঘরে ঘরে ছিল বালবিধবার সংখ্যাধিক্য। বালিকা বয়সে বৈধব্যের যন্ত্রণাকে মেনে নিয়ে গৃহকোণে নীরবে অশ্রুবর্ষণ করার দৃশ্য বিদ্যাসাগরকে বিচলিত করেছে। তিনি বালবিধবাদের পক্ষে কলম ধরে বাল্যবিবাহ রদ এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনের কথা বললে গোঁড়া রক্ষণশীল সমাজ গর্জে উঠল। তার বিরুদ্ধে গড়ে তুলল প্রতিরােধ। তবু কোনাে বিরুদ্ধ শক্তিই তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি।

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকীর্তি(Ishwar Chandra Vidyasagar’s literary achievements):

বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার যথার্থ শিল্পী। তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যে কলা নৈপুণ্যের অবতারণা করেন। তার নিদর্শন পাওয়া যায় তার বেতাল পঞ্চবিংশতি ‘(১৮৪৭)।’ বাঙ্গালার ইতিহাস'(১৮৪৮); ‘জীবনচরিত’ (১৮৫৪) ; ‘বর্ণপরিচয়'(১৮৫৫); ‘কথামালা’ প্রভৃতি গ্রন্থে। এ ছাড়া বাংলা গদ্যে পূর্ণচ্ছেদ(!); কমা(,); সেমিকোলন(;); ড্যাশ(—) চিহ্নের প্রয়ােগ করে বাংলাগদ্যকে তিনি আরও সুবিন্যস্ত করে তােলেন।

উপসংহারঃ

বিদ্যাসাগর শুধু সমাজসংস্কারক নন; ক্ষুধিত, পীড়িত, অসহায়দের সহায় শুধু নন; তিনি ত্যাগে দীপ্ত, কর্মে মহান। তার চরিত্রের প্রধান গৌরব তার অজেয় পৌরুষ, অক্ষয় মনুষ্যত্ব। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই তার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়। মহাকর্মযজ্ঞের অবসানে ঈশ্বরচন্দ্র আমাদের কাছ থেকে চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তার দুর্বার কর্মপ্রবণতা, মহান আদর্শ ও জীবনপ্রত্যয়।

আরও পডুনঃ স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী

Leave a comment