Kathasaritsagar

Kathasaritsagar is a story book. Its author is the poet Semdev. Semdev was a Kashmiri Brahmin. He wrote this book Kathasaritsagar based on the great story of virtue. This most famous story book has 18 pendulums, 124 waves and 22,000 verses. According to scholars, the book was written in the eleventh century AD. Saemdev has included many stories from the north-western version of the Panatantra in his book. In this huge book of his, various stories of popular love, heroism and wonder can be noticed. He has written this book in simple and straightforward language for the reading of people of all walks of life – rich, poor, scholars.

‘কর্থাসরিৎসাগর’ গল্পগ্রন্থ (Kathasaritsagar’story book):

‘কর্থাসরিৎসাগর’ হল একটি গল্পগ্রন্থ। এর রচয়িতা হলেন কবি সােমদেব। সােমদেব ছিলেন কাশ্মীরী ব্রাত্মণ। তিনি গুণাঢ্যের ‘বৃহকথা’ অবলম্বনে এই গ্রন্থখানি রচনা করেন। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এই গল্পগ্রন্থে ১৮ টি লম্বক, ১২৪ টি তরঙ্গ ও ২২০০০ শ্লোক আছে। পণ্ডিতগণের মতে খ্রীষ্টীয় একাদশ শতকে গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল। পঞতন্ত্রের যে উত্তর-পশ্চিম সংস্করণটি ছিল তা থেকে অনেকগুলি গল্প সােমদেব তাঁর গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। তার এই বিশাল গ্রন্থটিতে লােকপ্রিয় প্রেম, বীরত্ব ও বিস্ময়ের নানা কাহিনী লক্ষ্য করা যায়। ধনী-দরিদ্র, পণ্ডিত-মূখ সর্বস্তরের মানুষের পড়ার জন্য তিনি এই গ্রন্থটিকে সহজ ও সরল ভাষায় রচনা করেছেন।

পণ্ডিত সােমদেব কাশ্মীররাজ অনন্তের রাজত্বকালে তার সভাকবি ছিলেন। রাজার পত্নী সূর্যবতী ছিলেন বিভিন্ন শাস্ত্রে ও ভাষায় পারদর্শিনী। তারই প্রচেষ্টায় কিথাসরিৎসাগর নামক গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল। রাজা উদয়ন ও প্রেমিকা বাসবদত্তার কাহিনী বেশ সুন্দরভাবে বণিত হয়েছে উক্ত গ্রন্থে। তৎকালীন সমাজচিত্র সম্পর্কে, বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায় সম্পর্কে, ব্যবসা। বাণিজ্য স্থাপত্যকলা সম্বন্ধে বহু ঘটনার উল্লেখ এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থটি বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ভারতের বাইরে যেমন ইরান, জার্মানী, গ্রীস, আরব প্রভৃতি দেশেও এই গ্রন্থখানি বিশেষ সমাদর লাভ করেছে। কথাসরিৎসাগর শুধু সংস্কৃত কথাসাহিত্যের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নয়, পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম গল্প সংকলন গ্রন্থ।

নামের মধ্যেই যেন গ্রন্থ-পরিচয়ের অপূর্ব দ্যোতনা। সরিং শব্দের অর্থ নদী, সাগর শব্দের অর্থ সমুদ্র। এ শুধু বাক শিল্পের স্রোতস্বিনী তটিনী নদীই নয়, অনেক নদীসম্মিলনে এ যেন কথাসরিতের সাগর। কাশ্মীরের পণ্ডিত সােমদেব ত্রিগর্তের রাজকন্যা কাশ্মীররাজ অনন্তদেবের পত্নী সূর্যমতীর মনােরঞ্জনের জন্য এই মহাগ্রন্থখানি রচনা করেন। এর রচনাকাল সম্ভবতঃ ১০৬৩ থেকে ১০৮১ খ্রীস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনাে সময়ে। গ্রন্থারম্ভে সােমদেব লিখেছেন-পৈশাচী ভাষায় গুণাঢ্য রচিত ‘বৃহকথা’ অবলম্বনে তিনি সংস্কৃত ভাষায় এই কাহিনী রচনা করেছেন। আমার সামনে মূল গ্রন্থ যেমন আছে, আমি সেইভাবেই কথাসরিৎসাগর রচনা করবাে। পাণ্ডিত্য ও যশের লােভে আমি লিখছি না। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য কথাবস্তু সহজ সরল ভাবে রচনা, যাতে সকলেই এর রস আস্বাদন করতে পারে।

কবি সােমদেব যেমন যথার্থভাবে এই প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন, ঠিক তার কাঙ্খিত উদ্দেশ্যও সফল। সকলেই এই কথাসরিৎসাগরে অবগাহনে সক্ষম হয়েছেন। গ্রন্থে নিবন্ধ নানা রঙের নানা রশের নানান মননশীলতার গল্প আজও আমাদের মুগ্ধ করে। খ্রীষ্টপূর্বের কয়েকশ বছরের আগের জীবজন্তুর কাহিনী যেমন এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে, সে রকম আকাশ এবং পৃথিবীর নির্মাণ সম্বন্ধীয় ঋগ্বেদকালীন কাহিনীও এতে রয়েছে। রক্তপিপাসু বেতাল এবং সুন্দর কাব্যময়ী প্রেমের সুন্দর সহাবস্থান এখানে। তৎকালীন ভারতের সমাজচিত্র সুন্দরভাবে চিত্রিত এই কথাসরিৎসাগরে।

ভারতীয় সমাজের তথাকথিত নিম্নস্তরের সমাজচিত্র খুব স্বাভাবিক ভাবে অঙ্কিত হয়েছে এই গল্পসংকলনে। চোর, জুয়ারী, ধূর্ত, কপট, বারবনিতা গামীদের মনােবিকার কথাশিল্পের সুষম বন্ধনে যেমন উপস্থাপিত, তেমনি বৌদ্ধ ভক্ষু, শ্রমণ, ধর্ম এবং সৌন্দর্য সচেতন সাধারণ মানুষের কথাও এখানে বর্ণিত হয়েছে খুবই সুন্দর সহজ সরল সাবলীলভাবে। কবি সােম দেবের সংস্কৃতভাষা ব্যাকরণ সমাস সন্ধির কণ্টকে কণ্টকিত নয়। তার বর্ণনায় হজ সরল প্রাণবন্ত একটি ধারা সর্বদা বহমান। সংস্কৃত পদ্যে কাহিনী লেখার কৌশলকলা।

‘কর্থাসরিৎসাগর’ এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (Historical context of Kathasaritsagar)

সমাসবহুলতার প্রচলিত রীতি পরিত্যাগ করে সমাসরহিত অনুপ্রাসের থালায় তিনি পরিবেশন করেছেন তার কথাকলির গল্পগুচ্ছ। তার ভাষাশৈলী বেগবান এবং প্রধান বর্ণনায় বিষয় অযথা অলঙ্কারের ভারে ভারাক্রান্ত নয়। সূক্ষ্ম অনুভবশক্তির সাহায্যে তিনি সাধারণ মানুষের মননশীলতাকে গল্পে স্থান দিয়েছে নিখুঁত ভাবে। মূর্খদের সম্বন্ধে বিদ্রুপাত্মক অনেক গল্প এই গ্রন্থের এক বিশেষ দিক সূচিত করে। পাশ্চাত্য পণ্ডিত C.H.Twney ইংরেজী ভাষায় ‘কথাসরিৎসাগর’ অনুবাদ করেন। N. M. Penger ও এই গল্প সংকলনের ঐতিহাসিক পৌরাণিক ও তৎকালীন সামাজিক বিবরণে মুগ্ধ হয়েছেন।

কবি সােমদেব সম্পর্কে তার প্রশংসাবাণী-আমরা তাকে কল্পকথার জনক বলে অভিনন্দিত করবাে। তার রচনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তিগুলির অন্যতম। বস্তুতঃ নানান রসে সমৃদ্ধ প্রাচীন কাহিনীগুলির আস্বাদ লাভের জন্যই ইরান দেশবাসীরা এর গল্পগুলি তাদের ভাষায় রূপান্তরিত করেন। কথাসরিৎসাগরের আদর্শে রচিত হাজার এক ‘আরব্যরজনীর গল্প’ কি সাহিত্যের ঈশপের গল্প বিশ্বসাহিত্যে সমাদৃত হয়েছে। পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতগণের এটাই ভিমত। N. M. Panger কথাসরিৎ সাগরের ঐতিহাসিক ও সামাজিক বিবরণ সহ এক সংস্করণ চাশ করেছে। যেখানে এর সম্পর্কে উপরােক্ত উচ্ছ্বসিত প্রশংসাগুলি রয়েছে। সুতরাং স্নান্দেহে বলা যায়-ভারতীয় আখ্যানসাহিত্যে কথাসরিৎসাগরের মূল্য অপরিসীম।

আরও পডুনঃ পঞ্চতন্ত্র গল্পগ্রন্থ

Leave a comment