রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনীতিবাদী তত্ত্ব | Liberal Theory of the State
■ প্রশ্ন:- রাষ্ট্র সম্পর্কে ‘উদারনীতিবাদী’ তত্ত্ব আলোচনা করো। (Liberal Theory of the State).
■ উত্তর:- এই মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্র যেহেতু জন-সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাই রাষ্ট্রের কার্যাবলী জনকল্যাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে ব্যক্তি স্বাধীন এবং ব্যক্তিজীবনের ওপর রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে ব্যক্তির অবাধ বিকাশের সামনে বাধা সৃষ্টিকারী যাবতীয় শক্তিগুলিকে নির্মূল করা মাত্র। উদারনীতিবাদী-রাষ্ট্র তাই নেতিবাচক। অবাধ, নিয়ন্ত্রণ মুক্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ব্যক্তি আত্মসুখ, আনন্দ লাভ করতে আত্মনিয়োগ করে, নিজের স্বার্থ সে সবচেয়ে ভালো বোঝে।
উদারনীতিবাদী রাষ্ট্রের কাছে অর্থনীতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগই সামাজিক অগ্রগতির মূলশক্তি এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের মুক্ত পরিবেশকে বজায় রাখা। রাষ্ট্র-দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখা, ব্যক্তির সুরক্ষা, ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করে এবং অবাধ বাণিজ্যিক পরিবেশের বাইরে অবস্থান করে রাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম করে।
■ প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবসের মূল ধারণা। (Hobbes’ Original Idea of the State of Nature)
■ উত্তর:- হবসের মতে প্রাকৃতিক অবস্থা ছিল প্রাক্ -সামাজিক; এখানে প্রত্যেকে ছিল প্রত্যেকের শত্রু। প্রত্যেকেই ছিল নীচ প্রবৃত্তি সম্পন্ন; একে নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় তখন ছিল না। মাগুসোহবসের মতে প্রকৃতিগতভাবেও মানুষ স্বার্থপর এবং চরম স্বার্থান্বেষী। যুক্তিবুদ্ধির বদলে পশুসুলভ চত্র প্রবৃত্তির দ্বারাই মানুষ পরিচালিত হয়। আইনকানুনহীন প্রকৃতির রাজে-তাই সবসময় চলে অবিরাম দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের শত্রু। প্রত্যেকেই চাইত অন্যের ওপর ক্ষমতা জাহির করার, জোর যার মুলুক তার এই ছিল নীতি।
এই যথেচ্ছাচারকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় ছিল না। রাজনৈতিক চেতনা, কর্তব্য বা বাধ্যবাধকতার লেশমাত্র এখানে ছিল না। প্রকৃতির জগতে ন্যায় বিষয়া অভাব, আইন আর ন্যায়বিচারের অভাবেই এই অবস্থা। হবস স্থায়ী শাসনের অভাবেই আসলে এই ধরনের পরিস্থিতির কল্পনা করছেন। তিনি অরাজকতার অবস্থান ঘটাতেই সার্বভৌমরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। প্রকৃতির রাজত্বের অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই আত্মরক্ষার তাগিদে মানুষ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োজন অনুভব করে। হবসের মতে প্রকৃতির জগতে অবশ্য প্রত্যেকেই বেঁচে থাকার স্বাভাবিক অধিকার নিশ্চয়ই ভোগ করে, এবং তা টিকিয়ে রাখতেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন।