ভূমিকম্পের সম্ভাব্য কারণগুলি | Possible Causes of Earthquakes in Bengali

ভূমিকম্পের সম্ভাব্য কারণগুলি | Possible Causes of Earthquakes in Bengali

ভূমিকম্পের সম্ভাব্য কারণগুলি | Possible Causes of Earthquakes in Bengali

■ প্রশ্ন:- ভূমিকম্পের সম্ভাব্য কারণগুলি উল্লেখ করো। (Possible Causes of Earthquakes).

■ উত্তর:- সম্ভাব্য কারণ:- ভূমিকম্প প্রধানত দুটি কারণে সংঘটিত হয়।

(ক) প্রাকৃতিক কারণ বা ভূ-অভ্যন্তরীণ কারণ এবং

(খ) কৃত্রিম কারণ বা বাহ্যিক কারণ।

■ (ক) প্রাকৃতিক কারণসমূহ (Natural causes):

❏ (১) ভুতকের পাতের সঞ্চালন (Movement of the lithospheric plates):- ভূমিকম্পের মূল কারণই হল ভূত্বক গঠনকারী পাতের সঞ্চালন। পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলি পাত সীমান্ত বরাবর অবস্থিত। পাত সীমান্ত তিন ধরনের হয়, যেমন –

(i) অভিমুখী পাত সীমান্ত (Convergent plate boundary),

(ii) বিপরীতমুখী পাত সীমান্ত (Divergent plate boundary) ও

(iii) নিরপেক্ষ পাত সীমান্ত (Neutral plate boundary) বা চ্যুতি সীমান্ত।

● (i) অভিমূখী পাত সীমান্তে ভূমিকম্পের সংঘটন:- যে সীমান্ত বরাবর দুটি পাত বা প্লেট পরস্পরের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সেই সীমান্তকে অভিমুখী পাত সীমান্ত বলে। অভিমুখী সীমান্ত বরাবর একটি প্লেট অন্য প্লেটের নীচে ঢুকে গিয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের বুকে ভারতীয় পাত ও বার্মা পাতের মুখোমুখি সংঘর্ষে সৃষ্ট সুনামি এর উদাহরণ।

● (ii) বিপরীতমুখী পাত সীমান্তে ভূমিকম্পের সংঘটন:- সমুদ্রের তলদেশে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রসারণজনিত চাপের দরুন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এই কারণে বিপরীতমুখী পাত সীমান্ত ‘গঠনকারী পাত সীমান্ত’ নামে পরিচিত।

● (iii) নিরপেক্ষ পাত সীমান্ত বা চ্যুতি সীমান্তে ভূমিকম্পের সংঘটন:- একটি পাত অন্য একটি পাতকে অনুভূমিকভাবে অতিক্রম করার সময় শিলাস্তরের স্খলনের দরুন সৃষ্ট ট্রান্সফর্ম চ্যুতি বরাবর বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

❏ (২) নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-আলোড়ন (Earth’s movement in the region of new fold mountain):- নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে শিলাস্তরে স্থিতিস্থাপকতা না থাকার ফলে ভাঁজ গঠনের সময় ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

❏ (৩) চ্যুতির ফলে ভূমিকম্প (Earthquake due to faulting):- মার্কিন ভূবিজ্ঞানী এইচ.এফ.রিড (H. F. Reid) -এর “স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত তত্ত্ব” (Elastic Rebound Theory) অনুসারে ভূ-অভ্যন্তরীণ শিলাস্তর রবারের মতো স্থিতিস্থাপক (elastic)। অত্যধিক চাপ বা টানের ফলে শিলাস্তর আয়তনে প্রসারিত হয়। এই টান একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে শিলার স্খলন বা চ্যুতির সৃষ্টি হয় এবং ক্ষণিকের মধ্যেই ভগ্ন শিলাসমূহ স্বস্থানে ফিরে আসার চেষ্টা করে। ফলে ভূত্বক গঠনকারী শিলাসমূহের স্থিতিস্থাপকতা হঠাৎ বিনষ্ট হয় এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।

❏ (৪) ভূ-অভ্যন্তরীণ বাষ্পরাশির চাপমোচন বা সঞ্চয় (Reduction or accumulation of gases in the earth’s interier):- ভূ-অভ্যন্তরে সঞ্চিত বাষ্পরাশির চাপমোচনের পরিমাণ আরও বেড়ে গেলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়।

❏ (৫) ভৃত্বকের শিলাসমূহের চাপ বৃদ্ধি বা মোচন- (Release and increase of pressure on rocks):- ভূত্বকের শিলা সমূহের অত্যধিক চাপে সৃষ্ট ভূ-আলোড়নের প্রভাবে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। আবার, বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ কোনো অঞ্চল থেকে অপসারিত হওয়ায় চাপের বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় এবং ভূকম্পনের সৃষ্টি করে।

❏ (৬) তাপ বিকিরণ (Radiation of heat):- পৃথিবী সৃষ্টির সময়কাল থেকেই তাপ বিকিরণের মাধ্যমে শীতল ও সংকুচিত হয়ে চলেছে। কিন্তু ভূ-অভ্যন্তরে তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকায় ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর ও ভূগর্ভের শিলাস্তরের মধ্যে আয়তনের সামঞ্জস্য থাকছে না। ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হতে পারে।

❏ (৭) অগ্ন্যুৎপাতজনিত ভূমিকম্প (Earthquake due to volcanic eruptions):- আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুদ্গমের সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও প্রচুর পরিমাণে লাভা নিঃসরণের ফলে ভূগর্ভ সংকুচিত হলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। যেমন– ১৮৮৩ সালে জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যবর্তী ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুদ্গমের সময় ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল।

❏ (৮) ধস ও হিমানী সম্প্রপাত (Landslides):- অত্যধিক বৃষ্টিপাতের দরুন পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামলে ও হিমানী সম্প্রপাতের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।

❏ (৯) উল্কাপাত (Meteoric falling):- অনেক সময় বৃহদাকার উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের সংঘর্ষের দরুন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।

■ (খ) কৃত্রিম কারণ (Artificial Cause) বা বাহ্যিক কারণ:-

❏ (১) কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ (Construction of dams and reservoir):- নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণের ফলে সস্থিত জলরাশির প্রচণ্ড চাপে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন– ১৯৬৭ সালে মহারাষ্ট্রের কয়না নদীতে বাঁধ – নির্মাণের ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল।

❏ (২) ভূগর্ভে পারমাণবিক বিস্ফোরণ (Nuclear explosion inside the earth’s crust):- বর্তমানে ভূগাঠনিক নিরীক্ষার কাজে সাফল্য লাভের জন্য বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

❏ (৩) ডিনামাইট বিস্ফোরণ (Dynamite explosion):- বিভিন্ন খনি অঞ্চলে খনিজদ্রব্য উত্তোলনের জন্য ডিনামাইট ফাটানো হয়। তা ছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তাঘাট তৈরি করার জন্য ডিনামাইট ফাটানো হলে নিকটবর্তী অঞ্চলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়।

❏ (৪) অন্যান্য কারণ (Other Causes):- উল্লিখিত কারণগুলি ছাড়াও অনেক সময় খনি অঞ্চলে ধস নামলে কিংবা কার্স্ট অঞ্চলে গুহার ছাদ ধসে পড়লে মৃদু ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়।