ঔপনিবেশিক শোষণের ফলাফল | Result of Colonial Exploitation
বিভিন্ন পথ ধরে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও ধনসম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হয়ে যেত। ১৭৫৮ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে প্রেরিত ধনসম্পদের পরিমাণ ছিল ষাট লক্ষ পাউন্ড। যদিও কোম্পানি বাণিজ্যসূত্রে যে টাকা এই সময়ে ‘লাভ’ হিসাবে অর্জন করেছিল সেটা উপরোক্ত ষাট লক্ষ পাউন্ডের হিসাবের মধ্যে ধরা হয় নি। যাই হোক এদেশের অর্থসম্পদ এইভাবে ইংল্যান্ডের স্বার্থে ও কল্যাণে নিয়োজিত হয়েছিল।
■ (১) ইংল্যান্ডে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ:- ওপনিবেশিক শোষণের ফলে ইংল্যান্ডে যে পুঁজির সৃষ্টি হয়, তা সে দেশের শিল্প বিপ্লবের সহায়ক হয়। এই শিল্পবিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ইংল্যান্ডে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটে।
■ (২) ভারতীয় অর্থনীতির চরম সর্বনাশের সূচনা: কোম্পানির নগ্ন শোষণ নীতির ফলে ভারতীয় অর্থনীতির চরম সর্বনাশ ঘনিয়ে আসে। ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ্গণ একে প্রতিবাদহীন চালান (Drain) বা পলাশির লুণ্ঠন বলে অভিহিত করেছেন। পলাশি লুন্ঠনের ফলে ভারতের চিরাচরিত কৃষি ও ব্যাবসাবাণিজ্য ভেঙে পড়ে।
■ (৩) ভারতীয় কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধন:- ভারতের ঐতিহ্যমণ্ডিত কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়।
■ (৪) ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সহায়তা সাধন:- ভারত ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের শিল্প সামগ্রীর বাজারে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে এখানকার কাঁচামাল ইংল্যান্ডের কলকারখানার প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে শিল্পবিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে। এইভাবে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের অর্থনীতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ঔপনিবেশিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করে। রাজনৈতিক প্রাধান্যলাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে ইংরেজদের অর্থনৈতিক আধিপত্যও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।