সাতবাহন সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | Satavahana Empire Important Questions Answers

সাতবাহন সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | Satavahana Empire Important Questions Answers

সাতবাহন সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | Satavahana Empire Important Questions Answers

সাতবাহন সাম্রাজ্যের – প্রতিষ্ঠাতা সিমুক

সাতবাহন সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি

সাতবাহন সাম্রাজ্যের শেষ রাজা – যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী

সাতবাহন সাম্রাজ্যের ধর্ম – বৈদিক হিন্দু ধর্ম

সাতবাহন সাম্রাজ্যের ভাষা – প্রাকৃত

❏❏ সাতবাহন সাম্রাজ্য

■ ভূমিকা:- সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিমুক। প্রথম সাতকর্ণি ও গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর আমলে সাতবাহন সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। গৌতমী পুত্র সাতকর্ণীর মৃত্যুর পর সাতবাহন রাজা ছিলেন বশিষ্ঠিপুত্র পুলুমায়ি।

সময়কাল:-

সাতবাহন সাম্রাজ্যের সময়কাল বিষয়ে মতভেদ আছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন সময়কাল উল্লেখ করেছেন। তবে সর্বাধিক গ্ৰহণযোগ্য মতানুসারে সাতবাহন সাম্রাজ্যের সময়কাল ছিল খ্রিস্ট পূর্ব প্রথম শতক থেকে খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতক।

■ সিমুক-

পুরাণের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে অন্ধ্র জাতীয় সিমুক বা শ্রীমুখ সাতবাহন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ডঃ সরকারের মতে বিদিশার নিকটবর্তী অঞ্চল তিনি জয় করেন এবং কাণ্ব বংশীয় সুশর্মণকে উচ্ছেদ করেন।

কৃষ্ণ বা কানহ-

সিমুকের পর তাঁর ভাই কৃষ্ণ বা কানহ রাজা হন। তার রাজার সীমা নাসিক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি নাসিকে বৌদ্ধ শ্রমণদের জন্য একটি গুহা তৈরি করেন। তিনি সম্ভবত ১৮ বছর রাজত্ব করেন।

প্রথম সাতকর্ণী-

সাতবাহন রাজবংশের তৃতীয় রাজা ছিলেন প্রথম সাতকর্ণী। প্রথম সাতকর্ণীর রানী দেবী নয়নিকা বা নাগনিকার নানাঘাট লিপি থেকে প্রথম সাতকর্ণীর কৃতিত্বের কথা জানা যায়। হাতিগুম্ফা লিপিতেও প্রথম সাতকর্ণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথম সাতকর্ণী ছিলেন সাতবাহন বংশের প্রথম শাসক যিনি গোদাবরী উপত্যকার একটি সার্বভৌম সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। তার রাজধানী ছিল প্রতিষ্ঠানপুর।

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী-

শক শক্তির হাতে বিধ্বস্ত সাতবাহন শক্তিকে নিজ বাহু বলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী অশেষ খ্যাতি পান। তিনি ছিলেন সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। গৌতম পুত্র সুশাসক রূপে খ্যাতি পেয়েছিলেন প্রজাদের মঙ্গলের জন্য তিনি নিরন্তর কাজ করতেন।

বশিষ্ঠিপুত্র পুলুমায়ি-

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর পুত্র বশিষ্ঠিপুত্র পুলুমায়ি ১০০ খ্রিস্টাব্দে সাতবাহন সিংহাসনে বসেন। পুলুমায়ির রাজত্বকালে তাকে শক-ক্ষত্রপ রুদ্রদামন -এর সঙ্গে অবিরাম সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতে হয়। এর ফলে তিনি সাতবাহন সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চল যথা, কোঙ্কন, মালব প্রভৃতি শকদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী-

পুলুমায়ের পর সাতবাহন সিংহাসনে বসেন শিবশ্রী ও শিবস্কন্দ সাতকর্ণী। সাতবাহন বংশের সর্বশেষ প্রধান রাজা ছিলেন যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী। তার রাজত্বকাল ছিল ১৬৫-১৯৪ খ্রিস্টাব্দ। মহারাষ্ট্রের নাসিক, কানজেরি ও অন্ধ্রের কৃষ্ণা জেলায় তাঁর লিপি পাওয়া গেছে। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, তিনি মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রদেশ শাসন করতেন। পারগিটারের মতে, তার আমলে পুরাণের সম্পাদন করা হয়। দার্শনিক নাগার্জুনের তিনি পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

সাম্রাজ্যের পতন:-

যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণীর পর সাতবাহন শক্তি দ্রুত ক্ষয় পায়। তাঁর পরবর্তী রাজাদের মধ্যে বিজয় সাতকর্ণী, চন্দ্রশ্রী ও পুলুমায়ির নাম করা যায়। আভীর জাতির আক্রমণে সাতবাহন সাম্রাজ্যের পশ্চিম ভাগ হাত ছাড়া হয়। ইক্ষবাকুগণ কৃষ্ণা উপত্যকা অধিকার করে, পল্লবরা সাম্রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগ অধিকার করে। এভাবে সাতবাহন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়।

সাতবাহন সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা:-

সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর ধর্মনিরপেক্ষ সামরিক রাষ্ট্রের মতো জটিল বা অশোক -এর বৌদ্ধ নীতি দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রের মত উদারপন্থী ছিল না। সাতবাহন শাসন ধর্ম শাস্ত্রের বিধি অনুসারে শাসিত হত।

সাতবাহন সাম্রাজ্যের ভাষা;-

সাতবাহন যুগে প্রাকৃত ভাষার বিশেষ বিকাশ হয়েছিল। সাতবাহন রাজারা পৈশাচী প্রাক‌ত বা পশ্চিম ভারতীয় প্রাকৃত ভাষার গুনগ্ৰাহী ছিলেন। এই ভাষা থেকেই মারাঠি ভাষার উৎপত্তি হয়। সাতবাহন রাজা হাল প্রাকৃত ভাষায় ৭০০ গাথা বা গাথা সপ্তসতির সংকলন করেন।

সাতবাহন সাম্রাজ্যের ধর্ম:-

সাতবাহন রাজারা বৈদিক হিন্দু ধর্মের অনুরাগী ছিলেন। প্রথম সাতকর্ণী অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, বাসুদেব তাদের উপাস্য দেবতা ছিলেন। সাতবাহন রাজারা বৌদ্ধ ধর্ম -এর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন

উপসংহার:- সাতবাহন যুগে গ্রাম ও নগরের জীবনে বিহারের স্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অমরাবতীর স্তূপ গুলির ভাস্কর্য অত্যন্ত বিখ্যাত। পার্থবতা ও ইন্দ্রিয়তা অতিক্রম করে এই ভাস্কর্য একটি আধ্যাত্মিক চরিত্র লাভ করেছিল।

সাতবাহন সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

১. সাতবাহনদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল বলে মনে করা হয়?

উত্তর:- দাক্ষিণাত্যে।

২. পুরাণে সাতবাহনদের কি বলা হয়েছে?

উত্তর:- অন্ধ্র।

৩. সাতবাহন রাজ্য কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর:- সিমুক।

৪. সাতবাহন রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?

উত্তর:- গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।

৫. সাতবাহন রাজ্যের শেষ রাজা কে?

উত্তর:- যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী।