One of big empire The Mughal Empire and their ruler

Mughal empire: in India After the end of the Sultanate rule in India, Zahiruddin Muhammad Babar became the Mughal Empire Established. The word ‘Miguel’ is derived from the word Mongo. It means fearless. Magels. In Central Asia, they are known as Chakhtai-Turki, but in the history of India, they are Magel or Maghel.was known by name. The Mughals were able to maintain their dominance in India for many centuries. The history of the age is known from contemporary literature, official documents, accounts of European travelers, coins and architectural patterns.

মােগল সাম্রাজ্য(The Mughal Empire):

ভারতবর্ষে সুলতানি শাসনের অবসানের পর জহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবর মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । মঙ্গো শব্দ থেকে ‘ মােগল ’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে, এর অর্থ নির্ভীক । মােগলরা । মধ্য এশিয়ায় চাখতাই – তুর্কী নামে পরিচিত হলেও ভারতের ইতিহাসে এরা মােগল বা মােঘল নামেই পরিচিত ছিলেন । মােগলরা ভারতে বহুযুগ ধরে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পেরেছিল । সমকালীন সাহিত্য , সরকারি নথিপত্র , ইউরােপীয় ভ্রমণকারীদের বিবরণ , মুদ্রা ও স্থাপত্যের নিদর্শন থেকে এযুগের ইতিহাস জানা যায় ।

IMG 20200709 160025
The Mughal Empire

[ ১ ] বাবর ( ১৫২৬-১৫৩০ খ্রি ) : বাবর কথার অর্থ হল ‘ সিংহ । তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ তৈমুরলঙের বংশধর এবং মাতা ছিলেন মােগল বীর চেঙ্গিজ খার বংশজাত । বাবরের পিতা ওমর শেখ মির্জার মৃত্যুর পর মাত্র বারাে বছর বয়সে তিনি মধ্য এশিয়ার ফারঘনা রাজ্যের অধিপতি হন । কিন্ত আত্মীয়স্বজনদের শত্রুতার ফলে বাবর ফারঘনা থেকে বিতাড়িত হন । রাজ্য হারিয়ে তিনি দেশদেশান্তরে ঘুরে বেড়ান । এই সময় কাবুলের অভ্যন্তরীণ অরাজকতার সুযােগে তিনি অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে কাবুল দখল । করেন এবং নিজেকে বাদশাহ বলে ঘােষণা করেন । এরপরেই তাঁর দৃষ্টি পড়ে ভারতের ওপর । সে সময় দিল্লির সুলতান ছিলেন আফগান বংশীয় ইব্রাহীম লােদী দিল্লির আফগান অভিজাতরা ইব্রাহীম লােদীকে পছন্দ করতেন না । তাঁদের কয়েকজন বাবরকে দিল্লি আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানালে বাবর ভারত জয় । করার এক অপূর্ব সুযােগ পান । তিনি দেরি না করে ভারত আক্রমণ করেন । ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর দিল্লির কাছে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লােদিকে পরাস্ত ও নিহত করেন । এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে আফগান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং দিল্লি থেকে আগ্রা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর মােগলদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সময়ে আফগানদের মতাে রাজপুতরাও ছিল প্রবল শক্তিশালী । বাবর খানুয়ার যুদ্ধে ( ১৫২৭ খ্রিঃ ) মেবারের রাজপুত রাণা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করেন । পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাবর ভারতে যে মােগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন , খানুয়ার যুদ্ধের পর তা আরও সুদৃঢ় হয় এবং মােগল সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত হয় ।

ঘর্ঘরার যুদ্ধ : রাজপুতদের শক্তি বিধ্বস্ত করার পর বার বিহার সীমান্তে এসে পৌঁছান । সে – সময় পূর্ব ভারতে মােগলদের প্রতিরােধ করার উদ্দেশ্যে বাংলা ও বিহারের আফগানরা এক শক্তি -জোট গঠন করে মােগলদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয় । পাটনার কাছে ঘর্ঘরা নদীর তীরে মােগলদের সঙ্গে আফগানদের প্রচণ্ড যুদ্ধে আফগানরা পরাস্ত হয় ( ১৫২৯ খ্রিঃ )। ঘর্ঘরার যুদ্ধের ফলে উত্তর – ভারতে আফগানদের রাজনৈতিক আধিপত্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সাময়িকভাবে । বিলুপ্ত হয় এবং মােগল সাম্রাজ্যের সীমানা পূর্বে বিহার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় ।

মোগল সাম্রাজ্য এবং আফগানদের প্রতিদ্বন্দিতা(The Mughal Empire and the rivalry of the Afghans):

হুমায়ুন ( ১৫৩০-১৫৩৯ খ্রি ) :: বাবরের মৃত্যুর পর ( ১৫৩০ খ্রিঃ ) তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে বসেন । তিনি প্রথম দফায় ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । দিল্লির সিহাসন দখল করে সিংহাসনে বসেই হুমায়ুনকে পূর্ব – ভারতে শের খাঁর নেতৃত্বে আফান শক্তিও গুজরাটের বাহাদুর শাহ্ , এই দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বির সম্মুখীন হতে হয় , তবে আফগানদের নিজেদের সঙ্গেই তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল আকার ধারণ করে । ০ আফগান শক্তির পুনরুত্থান ( শের খ ) : পাণিপথের প্রথম যুদ্ধে ও পরে ঘর্ঘরার যুদ্ধে আফগান শক্তির বিপর্যয় ঘটলেও আফগানরা কখনও বিচ্ছিন্নভাবে এবং কখনও সংঘবদ্ধভাবে মােগলদের প্রতিরােধ করে যাচ্ছিল । কিন্তু তাদের প্রয়ােজন ছিল এক সুসংবদ্ধ সংগঠন ও এক প্রতিভাবান নেতা । বিহারের শের খা সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন । ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে শের খা বাংলার বিরুদ্ধে অগ্রসর হন । মামুদ প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার সঙ্গে শান্তিস্থাপন করেন । কিন্তু পরের বছর শের খাঁ দ্বিতীয়বার বাংলা আক্রমণ করে গৌড় দখল করে নেন । শের খাঁ – র গৌড় দখলের সংবাদ সম্রাট হুমায়ুনকে বিচলিত করে । তিনি কালবিলম্ব না করে শের খাঁর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন । পথে চুনার দুর্গদখল করে তিনি গৌড় আক্রমণ করেন । শের খাঁহুমায়ুনকে বাধা না দিয়ে বাংলা ত্যাগ করলেও একের পর এক বারাণসী , রােটাস ও জৌনপুর দখল করে কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হন । প্রায় নয় মাস বাংলায় আমােদ – প্রমােদে সময় নষ্ট করে হুমায়ুন পরােক্ষভাবে শের খাঁর শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করেন । যাইহােক , নিজের বিপত্তির কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত তিনি আগ্রার পথে যাত্রা করেন । বিহারে বক্সারের কাছে চৌসা নামক স্থানে শের খাঁ মােগলবাহিনীকে হঠাৎ আক্রমণ করে পরাস্ত করেন । ( ১৫৩৯ খ্রিঃ ) । এর ফলে বাংলা , বিহার ও জৌনপুর শের খাঁর দখলে আসে । এই সাফল্যের পর তিনি শেরশাহ ’ উপাধি গ্রহণ করেন । পরের বছর কনৌজের যুদ্ধে ( ১৫৪০ খ্রিঃ ) শেরশাহের কাছে হুমায়ুনের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে এবং শেরশাহ দিল্লির সিংহাসন দখল করেন । রাজ্যহারা হুমায়ুন ভারত ত্যাগ করে পারস্যে আশ্রয় নেন । * শেরশাহ ( ১৫৪০-১৫৪৫ খ্রিঃ ) : দিল্লির সিংহাসন দখল করে শের খা ‘ শেরশাহ’অভিধা গ্রহণ করে শূর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । সিংহাসন লাভের পর অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পাঞ্জাব , সিন্ধু , সুলতান , মালব , গােয়ালিয়র , বিহার ও বাংলার ওপর নিজের আধিপত্য স্থাপন করেন । বুন্দেলখণ্ডের কালির দুর্গ আক্রমণ কালে এক বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয় ( ১৫৪৫ খ্রিঃ ) । ও শাসক হিসেবে শেরশাহের কৃতিত্ব : ভারতবর্ষের ইতিহাসে । যে – সমস্ত শাসক নানা দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন , তার , মধ্যে অন্যতম হলেন শেরশাহ ।। মাত্র পাঁচ বছর ( ১৫৪০-৪৫ খ্রিঃ ) রাজত্বকালে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি যে শাসন কর্তৃত্ব , সাংগঠনিক শেরশাহ প্রতিভা ও শাসকোচিত অন্তদৃষ্টির পরিচয় দেন তা পরবর্তীকালে শাসকদের অনুসরণযােগ্য হয়ে উঠেছে । তাঁর শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক লক্ষ করেই ঐতিহাসিক ডঃ কালিকারঞ্জন কানুনগাে তাকে আকবরের চেয়েও মৌলিক প্রতিভাসম্পন্ন শাসক ও সংগঠক’বলে অভিহিত করেছেন ।

শাসনব্যবস্থা : শেরশাহের শাসনব্যবস্থা দুটি প্রশাসনিক স্তরে বিভক্ত ছিল , যেমন : ( ১ ) কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা এবং ( ২ ) প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা ।

( ১ ) কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা : শেরশাহের শাসনপদ্ধতির উৎস ছিল তুর্কি সুলতানদের আমলে প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা ও পারসিক শাসনপদ্ধতি । কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ছিলেন সুলতান স্বয়ং । কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার জন্য তিনি চারজন মন্ত্রী নিয়ােগ করেন , এরা হলেন : দেওয়ান – ই – উজিরাৎ ’ ( রাজস্ব বা অর্থমন্ত্রী ) , দেওয়ান – ই – আর্জ ‘ ( প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ) , “ দেওয়ান – ই – রিয়াস ’ ( পররাষ্ট্র মন্ত্রী ) , এবং‘দেওয়ান – ই – ইনসা ’ ( রাজকীয় ইস্তাহার তৈরি ও প্রেরণের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ) । এছাড়া বিচার ও গুপ্তচর বিভাগের প্রধান ছিলেন যথাক্রমে দেওয়ান ই কাজি’ও ‘ দেওয়ান – ই – বারিদ ’ ( শিকদারে – শিকদারান ) ।

( ২ ) প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য শেরশাহ সাম্রাজ্যকে ৪৭ টি সরকারে ও প্রতিটি সরকারকে কয়েকটি পরগণায় বিভক্ত করেন । সেই অর্থে , পরগণাই ছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর । প্রত্যেকটি সরকার শিকাদর , প্রধান মুনসেফ ( মুনসিফে মুনসিফান ) ও একজন প্রধান কাজির দ্বারা পরিচালিত হত । পরগণারশাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি পাটোয়ারী চৌধুরী মুকাদ্দম ’ নামে কয়েকজন কর্মচারী নিয়ােগ করেন । গ্রামের শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে শেরশাহ দেশের প্রচলিত শাসনব্যবস্থাকেই অক্ষুন্ন রেখেছিলেন । অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শেরশাহ দেশের পুলিশ প্রশাসনকে শক্তিশালী করে তােলেন ।

( ৩ ) রাজস্বব্যবস্থা : রাজস্বক্ষেত্রে শেরশাহ আমূল পরিবর্তন করেন । কৃষি ও ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতির জন্য শেরশাহ কয়েকটি ব্যবস্থা অবলম্বন করেন , এদের মধ্যে উল্লেখ্য ছিল : ( ক ) জমির পরিমাণ যথাযথ মাপজোকের ভিত্তিতে নির্ধারণ , ( খ ) রাষ্ট্রের প্রাপ্য ফসলের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা , ( গ ) ভূমিরাজস্ব যথাসম্ভব নগদ অর্থে আদায় করা , ( ঘ ) মধ্যস্বত্বভােগীদের অধিকার বিলুপ্ত করা এবং ( ঙ ) কৃষকদের জমির পরিমাণ ও স্বত্ব নির্দিষ্ট করা । শেরশাহ সর্বপ্রথমে জমি জরিপের ব্যবস্থা করেন । তার আমলে উৎপাদন শক্তি অনুসারে জমিগুলিকে ভালাে , মাঝারি ও নিকৃষ্ট এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় । জমির উৎপন্ন ফসলের বা ; অংশ রাজস্ব দিতে হত । তিনি জমির উপর প্রজার স্বত্ব সরকারিভাবে স্বীকার করে কবুলিয়ত’ও ‘ পাট্টার প্রচলন করেন । এই ব্যবস্থার ফলে সরকার ও কৃষক উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছিল । বাণিজ্যিক লেনদেন ও মুদ্রাব্যবস্থার দুর্নীতি দূর করার জন্য শেরশাহ সােনা , রূপা ও তামার আলাদা আলাদা মুদ্রা চালু করেন । তিনি দাম ’ নামে এক নতুন মুদ্রার প্রবর্তন করেন ।

( ৪ ) বিচারব্যবস্থা : দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবার জন্য শেরশাহ সুশৃঙ্খল বিচারব্যবস্থার প্রণয়ন করেন । ফৌজদারী ব্যবস্থার বিচারককে সিকদার বলা হত এবং দেওয়ানি মামলার ভার ছিল কাজি ও মীর আদলের । সম্রাট ছিলেন সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারক । বিচারের ক্ষেত্রে জাতি ধর্ম বা ব্যক্তির মধ্যে কোনাে রকম বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করা হত না ।

( ৫ ) সামরিক সংস্কার : আলাউদ্দিন খলজির অনুকরণে শেরশাহ তার সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তােলেন । সেনাবাহিনীতে আফগান ও পাঠানদের আধিপত্য থাকলেও তাতে বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায় । তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা ও দক্ষতা বজায় রাখেন । তিনি সেনাবাহিনীতে দাগ , হুলিয়া এবং ঘােড়ার গায়ে ছাপ প্রথা চালু করেন । ব্রজিত গৌড় নামে জনৈক হিন্দুকে তিনি প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন । ঐতিহাসিক আব্বাস সারওয়ানি তার এই সামরিক ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ।

( ৬ ) ধর্মব্যবস্থা : ধর্মীয় উদারতা ছিল শেরশাহের শাসনব্যবস্থার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক । তিনি হিন্দুদের সঙ্গেও যথাসম্ভব উদার ব্যবহার করেন । রাষ্ট্রনীতি থেকে ধর্মকে বিছিন্ন রাখার ব্যাপারে শেরশাহ খুবই সচেতন ছিলেন ।

( ৭ ) জনকল্যাণমূলক সংস্কার : সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযােগস্থাপনের জন্য শেরশাহ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রােড , আগ্রা থেকে বারহানপুর , লাহাের থেকে সুলতান প্রভৃতি রাজপথ নির্মাণ করেন । এছাড়া , সংবাদ আদানপ্রদানের জন্য তিনি ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেন । রাস্তার ধারে বৃক্ষরােপণ এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে সরাইখানা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয় ।

মূল্যায়ন . : শেরশাহ ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রজাহিতৈষী শাসক । ঐতিহাসিক আসকিন , ভিনসেন্ট স্মিথ , ডঃ কালিকারঞ্জন কানুনগাে এবং কালীকিংকর দত্তের মতে , ‘ শেরশাহের শাসনব্যবস্থা ছিল তাঁর সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার সাক্ষর । ঐতিহাসিক কিনির মতে , প্রশাসক হিসাবে শেরশাহ ছিলেন ইংরেজদের থেকেও দক্ষ । ব্যক্তিগত জীবনে নিষ্ঠাবান মুসলিম হলেও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসক ও আকবরের মতাে মহান । সম্রাট । অন্যদিকে , ডঃ আর . সি . ত্রিপাঠীও ডঃ পি সরনের মতে , শেরশাহের শাসনব্যবস্থা ছিল তাঁর পূর্ববর্তী শাসকদের অনুকরণ মাত্র । তাদের বিচারে , “ Sher Shah was a reformar , not an innovetor ” . পরিশেষে বলা যায় যে , পরিস্থিতির প্রয়ােজনে পূর্ববর্তীদের প্রবর্তিত ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন । করে শেরশাহ তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজানুরাগেরই পরিচয় দেন । তার শাসনব্যবস্থায় । যে শাসকোচিত অন্তর্দৃষ্টি ও সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় , তা আকবরসহ পরবর্তী মাগল সম্রাটদের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে । মােগল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা : শেরশাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইসলাম শাহ সিংহাসনে বসেন । ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর দিল্লির শূর বংশের দুর্বলতার সুযােগে হুমায়ুন পারস্য থেকে ভারতে ফিরে এসে লাহাের , দিল্লি ও আগ্রা জয় করেন । এইভাবে তিনি মােগল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন ।

মোঘল সাম্রাজ্যের প্রসার লাভ(The expansion of the Mughal Empire):

[ ৩ ] আকবর ( ১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিঃ ) : ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুনের মৃত্যুর তাঁর পুত্র আকবর মাত্র । চোদ্দ বছর বয়সে দিল্লির সিংহাসনে বসে নিজেকে ভারত সম্রাট বলে ঘােষণা করলে তাঁকে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত করার জন্য আফগানরা সচেষ্ট হয় । আফগান নেতা মহম্মদ আদিল শাহের হিন্দু সেনাপতি হিমু দিল্লি ও আগ্রা জয় করেন । এই অবস্থায় আকবরের ও তাঁর অভিভাবক বৈরাম খা হিমুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে ( ১৫৫৬ খ্রিঃ ) হিমু পরাজিত ও নিহত হন । এই পরাজয়ে ভারতে আফগান সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে বিলীন হয়ে যায় এবং তিন দশক ব্যাপী মােগল আফগান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে । পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মােগল সাম্রাজ্য স্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐতিহাসিক কালিকিঙ্কর দত্তের মতে , দ্বিতীয় পাণিপথের যুদ্ধ ভারতে মােগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত ভিত্তি রচনা করে এবং মােগল সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ শুরু হয় । আকবরের রাজ্য বিস্তার উত্তর ভারত জয় : পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর আকবর সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেন । তাঁর সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের ঐক্য ও নিরাপত্তা সুনশ্চিত করা । এই উদ্দেশ্যে তিনি বৈরাম খাঁর নেতৃত্বে আজমির , গােয়ালিয়র ও জৌনপুর জয় করেন । এর পর একে একে মধ্যপ্রদেশের মালব ও গন্ডােয়ানা তাঁর দখলে আসে ।

IMG 20200709 161010
সম্রাট আকবর

রাজপুতানা : গন্ডােয়ানার পর আকবর রাজপুতানা জয়ে মননানিবেশ করেন । সে সময় ভারতে রাজপুতরাই ছিল শৌর্যেবীর্যে সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি । অথচ রাজপুতদের সাহায্য ছাড়া । ভারতে মােগল সাম্রাজ্যের ভিত শক্তিশালী করা সম্ভব ছিল না । এই কারণে আকবর রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধে না গিয়ে বন্ধুত্বের নীতি গ্রহণ করেন । তিনি প্রথমেই জয়পুর ও বিকানীর রাজ্যের রাজ কন্যাদের বিবাহ করে রাজপুতদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ; রাজপুত বীর বিহারীমল , মানসিংহ , টোডরমল , ভগবানদাস প্রমুখদের সাম্রাজ্যের উচ্চপদে নিয়ােগ করেন এবং রাজপুতদের ওপর থেকে বিভিন্ন কর তুলে নেন । এর ফলে মাড়ওয়ার , বিকানীর , বুদি , জয়সলমীর প্রভৃতি রাজপুত রাজ্যগুলি আকবরের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় । কিন্তু মেবারের রাণা উদয় সিংহ আকবরের মিত্রতা নীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন । আকবর মেবারের রাজধানী চিতাের ( ১৫৬৭ খ্রিঃ ) অবরােধ করলে উদয় সিংহ পালিয়ে যান । তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র রাণাপ্রতাপ সিংহ মােগলদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন । অবশেষে হলদিঘাটের যুদ্ধে ( ১৫৭৬ খ্রিঃ ) রাণাপ্রতাপ বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হন । চিতােরের পতন ঘটলেও । রাণাপ্রতাপ মােঘলদের ( তিনি কিন্তু আকবরের ) বশ্যতা স্বীকার করেন নি । বনজঙ্গল থেকেই দীর্ঘ কুড়ি বছর মােঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং মৃত্যুর পূর্বে চিতাের ছাড়া মেবারের অধিকাংশ এলাকাই তিনি পুনরুদ্ধার করেন । তাঁর পুত্র অমর সিংহকেও আকবর পরাজিত করতে ব্যর্থ হন । কিন্তু রণথম্বাের , কালির , ‘ জয়সলমীর , মাড়ােয়ার প্রভৃতি রাজ্যগুলি আকবরের অধীনতা স্বীকার করে নেন । গুজরাট : এরপর আকবর গুজরাট এবং সুরাট জয় করেন । এই জয়ের ফলে মােগল । সাম্রাজ্য পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং গুজরাটের বিখ্যাত সমুদ্রবন্দরগুলি মােগল । সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় । বাংলা ও উড়িষ্যা : ইতিমধ্যে বাংলার আফগান শাসক দাউদ নিজেকে স্বাধীন বলে ঘােষণা করলে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে আকবর বাংলা দখল করেন । পরবর্তী সময়ে উড়িষ্যাও মােগল রাজ্যভুক্ত হয় । কাবুল কান্দাহার – সিন্ধু – কাশ্মীর : বাংলার পর তিনি উত্তর – পশ্চিম সীমান্তে কাবুল আক্রমণ করেন । ফলস্বরূপ কাবুল , কান্দাহার , কাশ্মীর ও সিন্ধু প্রদেশ তাঁর অধিকারে আসে । দক্ষিণ ভারত জয় : সমগ্র উত্তর ভারত জয়ের পর আকবর দক্ষিণ ভারত জয়ের এই উদ্দেশ্যে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আহম্মদ নগর দখল করেন । পরবর্তীকালে খান্দেশ ও বেরার জয় করেন । কার্যত খান্দেশের আসিরগড় দুর্গ দখল ( ১৬০১ খ্রিঃ ) ছিল আকবরের জীবনের শেষ অভিযান ।

এইভাবে আকবর উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণ গােদাবরী এবং পশ্চিম পারস্য থেকে পূর্বে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তােলেন । সাম্রাজ্য গড়ে তােলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই সাম্রাজ্যকে স্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে এক কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন । জাতিধর্মনির্বিশেষে প্রজাদের কল্যাণসাধন করাই ছিল এই শাসন রীতির প্রধান লক্ষ্য ।

[ 8 ] জাহাঙ্গীর ( ১৬০৫-২৭ খ্রিঃ ) : ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সেলিম , নূরউদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন । পিতার মতাে তিনিও রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন । তিনি প্রথমেই মেবারের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভিযান পাঠান । যুদ্ধে মেবারের রাণা পরাজিত হয়ে সন্ধি স্থাপন করেন । এরপর বার ভুইয়া নামে পরিচিত বাংলার স্বাধীন জমিদারদের বিরুদ্ধে মােগল অভিযান পাঠানাে হয় । একে একে বাংলার জমিদাররা পরাস্ত হন । ফলস্বরূপ বাংলায় মােগল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় । সমগ্র দক্ষিণ ভারত তিনি জয় করতে পারেননি ঠিকই , তবে আহম্মদনগর , বিজাপুর ও গােলকুণ্ডার সুলতানরা সম্রাটকে বাৎসরিক কর দিতে রাজি হন । রাজ্যবিস্তারের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর বিশেষ সফল অর্জন না করলেও প্রশাসনের ক্ষেত্রে কিছুটা কৃতিত্ব অর্জন করেন । তিনি নিরপেক্ষ বিচারের পক্ষপাতী ছিলেন । যে কেউ সম্রাটের বিচারপ্রার্থী হতে পারত । বিচারের ক্ষেত্রে তিনি কয়েক ধরনের নিষ্ঠুর দণ্ডপ্রথাও বন্ধ করেন ।

[ ৫ ] শাহজাহান ( ১৬২৭-৫৮ খ্রিঃ ) : জাহাঙ্গীরের মৃত্যর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র খুরম্ শাহজাহান উপাধি নিয়ে সংহাসনে বসেন । ( ১৬২৭ খ্রিঃ ) । সিংহাসন • লাভের কিছু দিনের মধ্যেই শাহজাহান বুন্দেলখণ্ড এবং দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহগুলি কঠোর হাতে দমন করেন । এই সময় বাংলায় অত্যাচারী পাের্তুগিজদের আধিপত্য হ্রাস করে । তাদের হুগলি ও চট্টগ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন । অল্পদিনের জন্য তিনি মধ্যএশিয়ার বলখও বদকশান দখল করতে সমর্থ হন । জাহাঙ্গীরের আমলে দক্ষিণ ভারতের সমগ্র এলাকা মােগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়নি । কিন্তু শাহজাহান প্রথমেই আহম্মদনগর জয় করেন । এরপর বিজাপুর ও গােলকুণ্ডা মােগলদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয় । শাহজাহান তার তৃতীয় পুত্র ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন । শাহজাহানের দীর্ঘ ত্রিশ বছরের রাজত্বকালে মােগল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় থাকা ছাড়াও বিভিন্ন দিকে ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করে । এ সময় একদিকে যেমন কোনাে বড়া বিদ্রোহ দেখা দেয় নি , অন্যদিকে কোনাে বৈদেশিক আক্রমণও মােগল সাম্রাজ্যের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করেনি । ইটালীয় পর্যটক মানুচি শাহজাহানের রাজত্বকালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন । সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব বজায় থাকার ফলে কৃষি , ব্যাবসাবাণিজ্য , সাহিত্য – সংস্কৃতি ও শিল্প স্থাপত্যের চরম উন্নতি ঘটে মােগল আমলের স্বর্ণযুগের সৃষ্টি হয় । সমকালীন দেশীয় ও বৈদেশিক ঐতিহাসিকরাশাহজাহানের শাসনকালের ভূয়সী প্রশংসাকরেছেন । যার যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় ব্রিটিশ ঐতিহাসিক স্মিথের এই মন্তব্যে , —শাহজাহানের রাজত্বকাল মােগলরাজবংশ এবং সাম্রাজ্যের তুঙ্গাতা চিহ্নিত করে ( Shahjaham’s reign marks the climax of Mughal dynasty and Empire )

শাহজাহানের সমালােচনা ও মূল্যায়ন : কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক শাহজাহানের রাজত্বকালকে “ মােগল সাম্রাজ্যের চরম বিকাশ ” বলে বর্ণনা করলেও ইউরােপীয় পর্যটকদের বর্ণনা ও অন্যান্য তথ্য থেকে জানা যায় যে , শাহজাহানের ৩০ বছরের রাজত্বকালেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের চিলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল , কারণ : প্রথমত , মধ্য এশিয়া অভিযানের মাধ্যমে শাহজাহান সাম্রাজ্য বিস্তারে বিশেষ সফল হননি । উপরন্তু খারাপ আবহাওয়া ও তুষারপাতের ফলে এই অভিযানে বহু মােগল সৈন্যের মৃত্যু হয় । দ্বিতীয়ত , শাহজাহানের রাজত্বকালেই ইংরেজ , ওলন্দাজ , ফরাসি প্রভৃতি ইউরােপীয় বণিকেরা ভারতে তাদের কুঠি নির্মাণ বাড়িয়ে দেয় । এছাড়া তার দুর্বলতার সুযােগে ভারতের রাজনীতিতে মারাঠাদের আবির্ভাব ঘটে । তৃতীয়ত , শাহজাহানের আড়ম্বর ও জাঁকজমকপ্রিয়তা , যুদ্ধ বিগ্রহে বিপুল ব্যয় প্রভৃতির ফলে মােগল রাজকোষ প্রায় খালি হয়ে যায় , ফলে জনগণের দুর্দশা চরমে ওঠে । গুজরাটসহ সাম্রাজ্যের অন্যান্য স্থান ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে । চতুর্থত , শাহজাহানের ধর্মান্ধতা শিয়া মুসলমান এবং হিন্দুদের শত্রুতে পরিণত করে । পঞ্চমত , শাহজাহানের রাজত্বকালে কৃষক , শিল্পী ও সাধারণ মানুষের ওপর প্রাদেশিক শাসন কর্তাদের অত্যাচার ও উৎপীড়ন চরমে ওঠে । শাহজাহানের রাজত্বকালের সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের বাদানুবাদের মধ্যে থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে , শাহজাহানের রাজত্বকাল ছিল গৌরব ও অগৌরবের এক আশ্চর্য মিশ্রণ । তাই , তার রাজত্বকালেই একদিকে যেমন মােগল সাম্রাজ্যের গৌরব চরম শিখরে ওঠে , অন্যদিকে তার সময় থেকেই মােগল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা হয় । শাহজাহানের রাজত্বকালে মােগল সাম্রাজ্যের গৌরব চরম শিখরে উঠলেও তাঁর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত দুঃখময় । সম্রাটের জীবিত অবস্থাতেই তাঁর চার পুত্র দারা , সুজা , ঔরঙ্গজেবও মুরাদ সিংহাসনের জন্য নিজেদের মধ্যে সংগ্রামে লিপ্ত হন । শেষপর্যন্ত ঔরঙ্গজেব অন্য সব ভাইদের পরাজিত করে সিংহাসন দখল করেন । বৃদ্ধ পিতা শাহজাহানকে আগ্রাদুর্গে বন্দি করে রেখে ঔরঙ্গজেব আলমগীর উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন ।

[ ৬ ] ঔরঙ্গজেব : সিংহাসনে বসেই ঔরঙ্গজেব রাজ্যবিস্তারে মন দেন । তাঁর নির্দেশে বাংলার শাসনকর্তা মীরজুমলা উত্তর – পূর্ব সীমান্তের আসাম রাজ্য আক্রমণ করে কিছু অংশ মােগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । মীরজুমলার মৃত্যুর পর বাংলার শাসনকর্তা শায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম আক্রমণ করেন । সেখানকার মগেরা প্রচণ্ড যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় । এইভাবে উত্তর – পূর্ব ভারতের সমস্ত গােলযােগের অবসান ঘটে এবং তা মােগল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে । দক্ষিণভারত : ঔরঙ্গজেব উত্তর ভারতের সমস্যাগুলির সাময়িক সমাধান করে দক্ষিণ ভারতে রাজ্যবিস্তারে উদ্যোগী হন । সে সময় দক্ষিণ ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তার করা ছাড়াও তাঁর লক্ষ্য ছিল বিজাপুর ও গােলকুণ্ডা দখল এবং হিন্দু মারাঠা রাজ্যের ধ্বংসসাধন । দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি বিজাপুর ( ১৬৮৬ খ্রিঃ ) ও গােলকুণ্ড ( ১৬৮৭ খ্রিঃ ) দখল করে নেন । ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার কারণ : ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার একাধিক কারণ ছিল , যেমন : প্রথমত , রাজধানী দিল্লি থেকে বহুদূরে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর , গােলকুণ্ড ও মারাঠা রাজ্যের মতাে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গেলে সে সুপরিকল্পিত ও উন্নত রাজনীতির প্রয়ােজন ছিল , তা ঔরঙ্গজেবের ছিল না । বারবার মােগল সেনাপতিদের বদল করা , তাঁদেরকে পুরােপুরি বিশ্বাস না করা , শিবাজী সম্পর্কে জয়সিংহের মত অভিজ্ঞ সেনাপতির পরামর্শ ও সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করা রণক্লান্ত মােগল সেনাদের নিয়ে একগুঁয়েমির বশে দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ছিল ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির দুর্বলতার উদাহরণ । দ্বিতীয়ত , শিবাজীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ না করা , তাঁকে বন্দি করা এবং শিবাজীর পুত্র শুজীর প্রাণদণ্ড দান ছিল ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ । এর ফলে মারাঠারা মােগলদের দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতে পরিণত হয় । উত্তর ভারতে যখন প্রবল রাজনৈতিক গােলযােগ ও বিদ্রোহের সূত্রপাত হচ্ছে তখন ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজির ছােটো ভাই রাজারামের বিধবা স্ত্রী তারাবাই – এর সন্ধিপ্রস্তাব মেনে নিয়ে তিনি রাজধানী দিল্লিতে ফিরে না গিয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেন । তৃতীয়ত , ঐতিহাসিক স্মিথও এলফিনস্টোন – এর মতে , দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গােলকোন্ডা রাজ্য দুইটি জয় করা ছিল ঔরঙ্গজেবের একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত , কারণ এই দুটি রাজ্যের কর্মচ্যুত হাজার হাজার ঘােড়সাওয়ার সেনারা মারাঠা সেনাবাহিনীতে যােগদিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে । অন্যদিকে এই দুটি মুসলিম রাজ্য স্বাধীন থাকলে তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই মােগলদের সঙ্গে মিলিতভাবে মারাঠা রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারতাে । কিন্তু ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার ও ডঃ সতীশ চন্দ্র এই মতবাদের বিরােধিতা করে বলেছেন যে , বিজাপুর ও গােলকোন্ডার মতাে দাক্ষিণাত্যের ক্ষয়িষ্ণু রাজ্য দুটির পক্ষে নবজাগ্রত মারাঠা শক্তিকে ধ্বংস করা কখনও সম্ভবপর ছিল না । চতুর্থত , দাক্ষিণাত্যের মারাঠা , বিজাপুর ও গােলকোন্ডা রাজ্যজয়ের পর মােগল সাম্রাজ্য অতিবিশাল আকার ধারণ করে , যা তখনকার দিনের ধীর যানবাহনের যুগে একজন শাসক বা একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রকৃতপক্ষে ছিল প্রায় অসম্ভব কাজ । তাই ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য জয়ের পর থেকেই সবার অলক্ষ্যে মােগল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা হয় । পঞ্চমত , দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য মােগল সাম্রাজ্যের কৃষি , গ্রামীণ শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে যায় । ফলে জায়গিরদার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হন , এতে মােগল রাজকোষের অর্থে টান ধরে । ষষ্ঠত , সুদীর্ঘ দাক্ষিণাত্যে অবিরামভাবে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থেকে ঔরঙ্গজেবের আমলে মােগল রাজকোষ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার দেউলিয়া হয়ে পড়ে । সপ্তমত , রাজধানী থেকে মােগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সুদীর্ঘকাল অনুপস্থিতির ফলে উত্তর ভারতে বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক গােলােযােগ দেখা দেয় , কেন্দ্রীয় প্রশাসন শিথিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে । এই অবস্থায় মােগল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও আমলার স্বাধীন হয়ে পড়ে এবং প্রাদেশিক শাসন কর্তারা রাজস্ব পাঠানাে বন্ধ করে দেন ।

আরও পডুনঃ গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস

Leave a comment