ভারত মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রকৃতি ও গভিরতা | Topography and Depth of Indian Ocean Floor
■ ভারত মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি (Topography of the Indian Ocean Floor):- পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর ভারত মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৭.৩৫ কোটি বর্গ কিমি এবং গড় গভীরতা প্রায় ৩,৮৭০ মিটার।
■ ভারত মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:-
● (১) মহীসোপান (Continental Shelves):- ভারত মহাসাগরের মোট আয়তনের প্রায় ৪.২ % অংশ জুড়ে মহীসোপান অঞ্চল বিস্তৃত। ভারত মহাসাগরের মহীসোপানের বিস্তৃতি সর্বত্র এক নয়। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে, আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগরে মহীসোপান অঞ্চলটি প্রায় ৬৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও ইন্দোনেশিয়া, জাভা, সুমাত্রা ইত্যাদি অঞ্চলে মহীসোপান অঞ্চল প্রায় ১৪০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
● (২) বেসিন বা অবনমিত অঞ্চল (Basins):- ভারত মহাসাগরের মোট আয়তনের প্রায় ৬০% অংশ জুড়ে বেসিন বা অবনমিত অঞ্চল বিস্তৃত। এই অবনমিত অঞ্চলের গড় গভীরতা প্রায় ৫,০০০ মিটার। এই মহাসাগরের প্রধান বেসিনগুলি হল ভারত ও এডেন উপসাগরের মাঝ বরাবর আরবীয় বেসিন, সোমালির পূর্ব দিকে সোমালি বেসিন, মাদাগাস্কারের পূর্বে মাসকারিন বেসিন, মাদাগাস্কারের দক্ষিণ-পূর্বে মরিশাস বেসিন, দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বদিকে নাটাল বেসিন, আগুলহাস বেসিন, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাংশে পশ্চিম অস্ট্রেলীয় বেসিন (ভারত মহাসাগরের গভীরতম ও বৃহত্তম বেসিন, এর গভীরতা প্রায় ৬,৪৫৯ মিটার), অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে অস্ট্রেলিয় বেসিন, কুমেরুর উত্তর-পশ্চিমে ভারত-কুমেরু বেসিন ইত্যাদি।
● (৩) সমুদ্রখাত (Oceanic Trenches):- ভারত মহাসাগরের তলদেশে গভীর সমুদ্রখাতের পরিমাণ অতি নগণ্য। এই মহাসাগরের উল্লেখযোগ্য খাতগুলি হল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের দক্ষিণে সুন্ডা খাত (এটি ভারত মহাসাগরের গভীরতম সমুদ্রখাত, এর গভীরতা প্রায় ৭,৭২৫ মিটার), ওব খাত (গভীরতা প্রায় ৬,৮৭৫ মিটার), মোজাম্বিক খাত (গভীরতা ৪,৯০০ মিটার), চ্যাগোস খাত (গভীরতা প্রায় ৪,৯০০) ও ভেমা খাত (গভীরতা প্রায় ৬,৮৩৯ মিটার)।
● (৪) সামুদ্রিক শৈলশিরা ও উচ্চভূমি (Ridges and Rises):- ভারত মহাসাগরের উত্তরদিকে কন্যাকুমারিকা থেকে দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত প্রসারিত শৈলশিরাটি মধ্যভারতীয় শৈলশিরা নামে পরিচিত। মধ্য ভারতীয় শৈলশিরার উত্তরে রয়েছে লাক্ষাদ্বীপ চ্যাগোস শৈলশিরা, মাঝ বরাবর রয়েছে চ্যাগোস-সেন্টপল শৈলশিরা, দক্ষিণে রয়েছে আমস্টারডাম সেন্টপল মালভূমি। এ ছাড়া ভারত-কুমেরু মহাসাগরীয় শৈলশিরা, সোকোট্রা-চ্যাগোস শৈলশিরা, সেচেলিস শৈলশিরা, প্রিন্স এডওয়ার্ড-ক্রোজে শৈলশিরা, নব্বই-পূর্ব শৈলশিরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
● (৫) দ্বীপসমূহ (Islands):- ভারত মহাসাগরে প্রধানত মহাদেশীয়, আগ্নেয় এবং প্রবাল এই তিন প্রকারের দ্বীপ লক্ষ করা যায়। মহাদেশীয় দ্বীপের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, মাদাগাস্কার, জাঞ্জিবার, কোমোরো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আগ্নেয় দ্বীপের মধ্যে মরিশাস, রিইউনিয়ন, ব্যারেন ও নারকোনডাম দ্বীপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য এবং প্রবাল দ্বীপের মধ্যে লাক্ষাদ্বীপ ও মালদ্বীপ উল্লেখযোগ্য।
● (৬) প্রান্তদেশীয় সমুদ্র (Marginal Seas):- ভারতের উপকূলীয় অংশ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভগ্ন না হওয়ায় সাগর ও উপসাগরের সংখ্যা খুবই কম। এই মহাসাগরের উল্লেখযোগ্য সাগর ও উপসাগরগুলি হল লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, এডেন সাগর, ওমান উপসাগর, মার্তাবান উপসাগর, কচ্ছ উপসাগর, খাম্বাত উপসাগর, পক প্রণালী ও মালাক্কা প্রণালী ইত্যাদি।