সুপ্রিয় বন্ধুরা,
Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি ভারতে অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা | Powers and Rank of Chief Minister Various States in India . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে ভারতে অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা | Powers and Rank of Chief Minister Various States in India ।
ভারতে অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা | Powers and Rank of Chief Minister Various States in India
■ প্রশ্ন:- ভারতে অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো (Powers and Rank of Chief Minister)।
উত্তর:- ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতি অনুসারে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর এবং রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতির কোন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা না থাকায় এবং সংবিধানের ৪২ ও ৪৪ -তম সংশোধন অনুসারে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার পরামর্শমত কাজ করতে বাধ্য থাকায় সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য অবিসংবাদিত ও নিরঙ্কুশ। অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালগণ কতকগুলি ক্ষেত্রে সংবিধান অনুসারে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করেন।
এই সমস্ত ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীদের প্রকৃতপক্ষে কোন ক্ষমতা থাকে না। অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়মতান্ত্রিক এবং প্রশাসনিক প্রকৃত কর্তৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। সংবিধানে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে ঠিক ধারণা লাভের জন্য রাজ্যের রাজ্যপাল, মন্ত্রিসভা, বিধানসভা, নিজ দল ও জনগণের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক আলোচনা করা দরকার।
■ (১) রাজ্যপালের মুখ্য পরামর্শদাতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী:-
রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নিযুক্ত করে [১৬৪ (১) ধারা]। রাজ্যপালের এই ক্ষমতা আনুষ্ঠানিক মাত্র। নির্বাচনের পর নবগঠিত বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে আহ্বান জানান। মন্ত্রিসভার নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীই হলেন রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা। সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত অধিকাংশ ক্ষমতাই কার্যতঃ মুখ্যমন্ত্রী ভোগ করেন, কারণ স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমত রাজ্যপালকে চলতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যমন্ত্রিসভার সংযোগসাধন করেন। শাসনকার্য পরিচালনা এবং আইনের প্রস্তাব সম্পর্কিত মন্ত্রিসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে জানানো মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব।
রাজ্যপাল নিজেই রাজ্যের শাসন ও আইন সম্পর্কে যে সকল তথ্য জানতে চান সে সম্পর্কেও রাজ্যপালকে অবগত করানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর; মন্ত্রিসভায় বিবেচিত হয়নি এমন কোন বিষয়ে কোন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করার জন্য রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করতে হয়। তবে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক অনেকাংশে উভয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার মনোভাবের উপর নির্ভরশীল।
■ (২) মন্ত্রিসভার নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী:-
মন্ত্রিসভার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে “সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য” (Primus inter pares) বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্যের মন্ত্রিসভার নেতা (১৬৩ ধারা)। মন্ত্রিসভায় তাঁর স্থান শীর্ষে। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন। আবার মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারেই রাজ্যপাল মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। বস্তুতঃ রাজ্যের মন্ত্রিসভার আয়তন, নিয়োগ ও দপ্তর বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই রাজ্যপালের মাধ্যমে কার্যকর হয়। মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি দপ্তর রদবদল করতে পারেন, তাঁর বিরাগভাজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন, বা রাজ্যপালের মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করতে পারেন।
আবার নিজে পদত্যাগ করে তিনি সমগ্র মন্ত্রিসভার পতন ঘটাতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীই হলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার কেন্দ্রবিন্দু, তাঁকে কেন্দ্র করেই মন্ত্রিসভার উত্থান-পতন ঘটে থাকে। রাজ্য মন্ত্রিসভা বা ক্যাবিনেটের বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান করেন। এই বৈঠকের কর্মসূচী তিনি নির্ধারণ করেন এবং বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সরকারের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা মুখ্য। সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ কার্যকর করার মূল দায়িত্বও তাঁর। মন্ত্রিসভার সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখা এবং সরকারী নীতির সমন্বয় সাধনের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে যত্নবান হতে হয়। সরকারের দপ্তরসমূহের কার্যাবলী তিনি তদারক করেন এবং প্রয়োজন মনে করলে ক্ষেত্রবিশেষে হস্তক্ষেপ করেন। বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে তিনি তার মীমাংসার ব্যবস্থা করেন, সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং মন্ত্রিসভার ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এক বা একাধিক দপ্তরের দায়িত্ব নিতে পারেন; কিন্তু তাঁর মূল দায়িত্ব হল মন্ত্রিসভাকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সমন্বয় সাধন করা। বস্তুতঃ মুখ্যমন্ত্রী হলেন সমন্বয়কারী ও তদারককারী মন্ত্রী।
■ (৩) বিধানসভার নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী:-
রাজ্যের আইনসভার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাজ্য আইনসভায় তাঁর ভূমিকা দ্বিবিধ। (ক) সরকারের প্রধান হিসাবে এবং (খ) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে আইনসভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইনসভায় সরকার-বিরোধী সমালোচনার জবাব দেওয়া, সরকারী নীতি ব্যাখ্যা করা এবং সরকারী নীতি কার্যকর করা সম্পর্কে সরকারী বক্তব্য আইনসভায় পেশ করার চূড়ান্ত দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। মুখ্যমন্ত্রী হলেন সরকারের মুখপাত্র। বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ ও প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন। সরকারের নেতা হিসেবে তিনি সভা ও সভার সদস্যদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেন। আবার সভা পরিচালনার ব্যাপারে তিনি বিধানসভার স্পীকার এবং বিধান পরিষদের সভাপতিকে সাহায্য করেন। রাজ্য আইনসভার কার্যতালিকা মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি রাজ্যপালের মাধ্যমে আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে বা স্থগিত রাখতে পারেন। রাজ্যের আইনসভা তাঁর ইচ্ছার অনুকূলে পরিচালিত হয়।
■ (৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী:-
মুখ্যমন্ত্রী হলেন ক্ষমতাসীন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, এই পরিচিতির ভিত্তিতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ও কর্মকুশলতার উপর তাঁর দলের জনপ্রিয়তা, সাফল্য ও ভবিষ্যৎ বহুলাংশে নির্ভরশীল। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলের নির্বাচনী কর্মসূচী রূপায়ণে সরকার কতটা সফল হয়েছে তার উপর পরবর্তী নির্বাচনে দলের সাফল্য-অসাফল্য সূচিত হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দলের ভাবমূর্তি বিকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। আইনসভার ভিতরে ও বাইরে দলীয় সদস্য ও সংগঠনের সহযোগিতা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত দরকারী। তাই উভয় ক্ষেত্রে দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় পদত্যাগের ভয় দেখিয়ে তিনি দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখেন। বস্তুতঃ দলীয় নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীকে দক্ষ হতে হয়।
■ (৫) জনগণের নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী:-
মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্যের প্রকৃত শাসকপ্রধান। এই দিক থেকে তিনি হলেন রাজ্যের জনগণের নেতা। রাজ্যসরকারের সাফল্য ও জনপ্রিয়তা জননেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মর্যাদা জনসমর্থনের উপর নির্ভরশীল। জনসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুধাবন করে এবং জনমত উপলব্ধি করে তাঁকে সরকারী নীতি পরিচালনা করতে হয়। রাজ্যের সাধারণ মানুষ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতার পরিধি ও পদমর্যাদার প্রকৃতি আলোচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক জোহারী মুখ্যমন্ত্রীদের তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন: (ক) কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের একদলীয় মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী, (খ) কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নয় এমন কোন দলের একদলীয় মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী এবং (গ) কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম শ্রেণীর মুখ্যমন্ত্রীদের পিছনে কেন্দ্রীয় সরকার ও দলের নেতাদের সমর্থন এবং রাজ্যের রাজ্যপাল ও বিধানসভায় দলীয় সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতা বর্তমান থাকে। এ রকম ক্ষেত্রে পদাধিকারিগণ দক্ষ, বিজ্ঞ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হলে মুখ্যমন্ত্রী অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে ডঃ বিধানচন্দ্র রায়, চন্দ্রভানু গুপ্ত, গোবিন্দবল্লভ পন্থ প্রভৃতি মুখ্যমন্ত্রীদের নাম উল্লেখযোগ্য। আর ব্যক্তিত্বহীন হলে এই শ্রেণীর মুখ্যমন্ত্রিগণ কেন্দ্রের ক্রীড়নকে পরিণত হন। দ্বিতীয় শ্রেণীর মুখ্যমন্ত্রিগণ কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপালের দিক থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হন। নিজ দলের উপর এই শ্রেণীর মুখ্যমন্ত্রীদের যথেষ্ট কর্তৃত্ব থাকা দরকার। তা না হলে সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য চালানোর ক্ষেত্রে বিপত্তি দেখা দেয়। কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রিগণ স্বাভাবিক ক্ষমতার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হন। শরিকদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সেইমত সরকার পরিচালিত হয়। মন্ত্রী নিয়োগ, দপ্তর বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কোন কর্তৃত্ব থাকে না।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করেও কোন মন্ত্রী মন্ত্রিসভায় বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারেন। প্রসঙ্গক্রমে উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬৯ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজয় মুখার্জীর কথা বলা যায়। সর্বোপরি পদাধিকারীর ব্যক্তিত্ব, কার্যদক্ষতা ও গুণগত যোগ্যতার উপর মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বহুলাংশে নির্ভরশীল। পদাধিকারী যোগ্য, বিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশাসক হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্যাপক ক্ষমতা ও প্রভূত মর্যাদার অধিকারী হবেন তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা এবং জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা মুখ্যমন্ত্রীর প্রভাবের পরিধিকে প্রসারিত করে।
আরও পড়ুন:- ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা