সুপ্রিয় বন্ধুরা,
Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল ও বিভিন্ন পর্যায় | Period and Different Stages of Mehergarh Civilization . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল ও বিভিন্ন পর্যায় | Period and Different Stages of Mehergarh Civilization।
মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল ও বিভিন্ন পর্যায় | Period and Different Stages of Mehergarh Civilization
❏ মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল ও বিভিন্ন পর্যায় (Period and Different Stages of Mehergarh Civilization)
■ মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল:- প্রাচীনত্ব নির্ধারণের অতি আধুনিক রেডিও কার্বন -১৪ পদ্ধতি, বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ ও পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, মোট সাতটি পর্বে মেহেরগড় সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছিল, এর মধ্যে প্রথম তিনটি পর্ব নতুন প্রস্তর যুগের সমসাময়িক কালের বলে মনে করা হয়। এই সাতটি পর্ব থেকে মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীদের ভ্রাম্যমান পশুপালকের জীবন থেকে যাত্রা করে কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনে উত্তরণের ইতিহাসের একটি সুস্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়।
■ মেহেরগড় সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায় :
■ [১] প্রথম পর্ব : মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্বের সময়কালটি খ্রিস্টপূর্ব ৭,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ অব্দ পর্যন্ত পরিব্যপ্ত ছিল।
● আত্মরক্ষা ও শিকারি জীবন : মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীদের আত্মরক্ষা ও শিকারি জীবনের প্রমাণ হিসাবে এই অঞ্চলে পাথরের নানা ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র ও হাতিয়ার পাওয়া গেছে। এ থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, প্রথম পর্বে মেহেরগড়ের সভ্যতার অধিবাসীরা পাথরের অস্ত্রের সাহায্যে পশু শিকার করে জীবন ধারণ করতো।
● কৃষি ও পশুপালন : প্রথম দিকে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষ ‘খাদ্য সংগ্রহকারী’ হলেও পরবর্তীকালে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়। এই অঞ্চলে অস্থায়ী ভাবে যাযাবর জীবনযাপনকারী শিকারি ও পশুপালকেরা পরবর্তীকালে এখানে স্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তোলে এবং ধীরে ধীরে কৃষিকেন্দ্রিক জীবন যাত্রার সূত্রপাত হয়। গম, যব ও বার্লি ছিল এযুগের প্রধান খাদ্যশস্য। কৃষিকাজ ও পশুপালনের নিদর্শন হিসাবে এখানে নিড়ানি, কাস্তে, কোদাল, জাঁতা, হামালদিস্তা, শস্যাগার এবং খোঁয়াড়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ভেড়া, ছাগল, গরু ও শুয়োর ছিল এই যুগের প্রধান পালিত পশু।
● বাসস্থান : প্রথম দিকে এখানে রোদে শুকানো মাটির ইট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা হত। বেশীরভাগ সময়ে এই সব বাড়িতে দুই বা ততোধিক ঘর থাকতো, অনেক সময় এরা জিনিসপত্র রাখার গুদাম হিসাবেও ব্যবহৃত হত। এইযুগে দুই সারি বাড়ির মধ্যে গলিপথ রাখা হত।
● মৃৎশিল্প : প্রথম দিকে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষদের মৃৎশিল্প সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। তবে ৬,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে এখানকার মানুষ মাটির নানান রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করবার কৌশল শিখে নেয়।
■ [২] দ্বিতীয় পর্ব : মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ অব্দ থেকে ৪,০০০ অব্দ পর্যন্ত পরিব্যপ্ত ছিল।
● কৃষি : প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতার সঙ্গে এই পর্বের মানুষ কার্পাস বা তুলে চাষ করতে শেখে। এই পর্বে পাওয়া প্রচুর কার্পাস বীজ থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। গ্রম, যব ও তুলো চাষের প্রয়োজনে মেহেরগড় সভ্যতার দ্বিতীয় পর্বের মানুষ মোটামুটি কাজ চালানোর উপযোগী জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।
● শিল্প : এই পর্বে কুমোরের চাকের সাহায্যে মাটির পাত্র তৈরির প্রচলন হয়। এই সব পাত্রগুলো নানান রঙে রঙ করা হত। এই পর্বে তামার তৈরি কয়েক রকম অলঙ্কার পাওয়া গিয়েছে।
● বাণিজ্য : সমুদ্র থেকে বহুদূরে অবস্থিত এই অঞ্চলে সামুদ্রিক শঙ্খ ও নানান ধরনের পাথরের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে, যা এখানকার অধিবাসীদের বহিবাণিজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
■ [৩] তৃতীয় পর্ব : মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্বের সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ থেকে ৩,০০০ অব্দের মধ্যে পরিব্যপ্ত।
● কৃষি : এই পর্বে গম, যব ও কার্পাস ছাড়াও আরও নতুন নতুন ফসলের চাষ এযুগের কৃষিকর্মে বিশেষ অগ্রগতির সাক্ষ্য দেয়।
● শিল্প : প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে তামার অলঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। তৃতীয় পর্বে পাওয়া অনেকগুলি তামা গলানোর উপযোগী পোড়া মাটির পাত্র বা মুচি তাম্র শিল্পে এযুগের মানুষের অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করে। এছাড়া চাকে তৈরি এবং চুল্লীর আগুনে পোড়ানো নানা রঙের মৃৎপাত্রের অস্তিত্ব এই যুগের মৃৎশিল্পে আরও উন্নতির সাক্ষ্য বহন করে। এছাড়া এই কালসীমায় মেহেরগড় সভ্যতায় বহির্বাণিজ্যের ক্রমবিস্তার ঘটে।
■ [4] চতুর্থ পর্ব থেকে সপ্তম পর্ব : এই সময় কালে মেহেরগড় সভ্যতার বিকাশের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে কারিগরি উন্নতি এবং মাটির তৈরি টেরাকোটা শিল্প আরও উন্নত হয়, তবে হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন নগরের মতো এখানকার বসতিগুলো প্রাচীর ঘেরা ছিল না। অনুমান করা হয় যে এই সভ্যতার সঙ্গে ইরান, আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সম্পর্ক ছিল। তবে ঐতিহাসিক সেরিন রত্নাগার মনে করেন যে, এখানকার অধিবাসীরা সূতিবয়ন বিদ্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক ডক্টর ইরফান হাবিব এখানে শ্রেণি বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন। মেহেরগড়ে প্রাপ্ত নানান জিনিসের মধ্যে হার, কানপাশা প্রভৃতি অলংকার, পাথর ও ধাতুর তৈরি নানান, বাসনপত্র, পোড়ামাটির মূর্তি ও সিলমোহর ছিল উল্লেখযোগ্য।
বস্তুতপক্ষে এই সভ্যতা ছিল হরপ্পা সভ্যতার শিল্প সংস্কৃতির পথ প্রদর্শক।
■ মেহেড়গড় সভ্যতার গুরুত্ব : প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে মেহেড়গড় সভ্যতার অসাধারণ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ :
প্রথমত, মেহেড়গড় সভ্যতার প্রাচীনত্ব ও ব্যপ্তি বিস্ময়কর। অনুমান করা যায়, এশিয়া মহাদেশের আর কোথাও এত সুপ্রাচীন সভ্যতার উদ্ভব হয়নি। মেহেড়গড় সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব এক ধাক্কায় খ্রিষ্টপূর্ব সাত হাজার বছরের কালসীমা স্পর্শ করেছে। দ্বিতীয়ত, প্রখ্যাত গবেষক জোনাথান কেনোয়ার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘মেহেড়গড়ে যার সূচনা তারই বিকশিত অধ্যায় হল হরপ্পা সভ্যতা'। মেহেড়গড় সভ্যতা যে ছিল হরপ্পা সভ্যতার পূর্বসুরী এবিষয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই।
তৃতীয়ত, এন.এস.রাজারাম, এস.পি.গুপ্ত, শ্রীকান্ত তালাগারে এবং প্রখ্যাত ভারতত্ত্ববিদ ডেভিড ফ্রলে প্রমুখ ঐতিহাসিকরা মেহেরগড় সভ্যতা, হরপ্পা সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতাকে ভারতের নিজের এক অবিচ্ছিন্ন সভ্যতার বিভিন্ন পর্ব বলে চিহ্নিত করে এদের একসঙ্গে সিন্ধু সরস্বতী সভ্যতা নামে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF