সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar

 

সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar
সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar

সুপ্রিয় বন্ধুরা,

Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar।




সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার পরিচয় | Emperor Akbar Governance in Bengali | Regime of Emperor Akbar

 প্রশ্ন: আকবরের শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে (Describe the chief features of Akbar's Administrative System)

উত্তর:- সম্রাট আকবর কেবল সমরবিজয়ী নেতা নয়, সুদক্ষ প্রশাসক হিসেবেও তাঁর নাম ভারত-ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। আবুল ফজল তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেছেন ‘প্রজাদের সার্বিক উন্নয়ন, রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান, আর্থিক শৃঙ্খলা স্থাপন প্রভৃতিকে ‘শাসন’ - এর প্রকৃত উদ্দেশ্য বলে বর্ণনা করেছেন। তাই মনে করা হয়, এই আদর্শ দ্বারাই আকবরের শাসননীতি পরিচালিত হয়েছিল। আকবরের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে স্যার যদুনাথ সরকার একে, “ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে আরবিক ও পারসিক ব্যবস্থার সংমিশ্রণ” বলে বর্ণনা করেছেন ('The Perso-Arabic system in an Indian setting.')


ঐতিহাসিক রিজভি আকবরের শাসনব্যবস্থাকে, “প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাসনকাঠামাের যথার্থ সমন্বয়ে ও শের শাহ প্রবর্তিত শাসন কাঠামোের উপর ভিত্তি করে” রচিত বলে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায় : “ Akbar ' s administra tion .... drew heavily upon the successful experiments of Ancient India and the Delhi Sultanate, and were adopted immediately from Sher Shah's practice”

❏ সম্রাটের ক্ষমতা:- 

আকবরের শাসনকাঠামােকে একটি কেন্দ্রীভূত রাজতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চে ছিলেন সম্রাট। তার ক্ষমতা ছিল অবাধ ও সীমাহীন। রাজা দৈব অধিকারী বলে তিনি দাবি করতেন। তবে স্বৈরাচারী হলেও আকবর কখনও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। সম্রাট আকবরের মতে, রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল রাজ্যের নিরাপত্তাবিধান ও সার্বিক উন্নয়ন সাধন। তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী রাজা।


শাসনব্যবস্থাকে সচল ও কার্যকরী রাখার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। প্রত্যহ প্রাতে তিনি জনগণকে ‘ঝরােখা দর্শন’ দিতেন। এখানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে জনগণের অভাব-অভিযােগ শুনতেন। তারপর 'দেওয়ান-ই-আমে' অনুষ্ঠিত প্রকাশ্য দরবারে উপস্থিত থেকে সম্রাট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। এর মাঝে বসত মন্ত্রীদের সাথে একান্ত আলােচনা আসর। এখানে তিনি উচ্চপদস্থ মন্ত্রী ও কর্মীদের সাথে প্রশাসনিক বিষয় আলােচনা করতেন।

এছাড়া বিভিন্ন ধর্মাচার্যদের সাথেও তিনি বিভিন্ন ধর্মতত্ত্ব আলােচনা করতেন। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সম্রাট আকবর যৌথ-দায়িত্বসম্পন্ন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।


❏ কেন্দ্রীয় শাসন:-

কেন্দ্রীয় শাসনে সম্রাটকে সাহায্য করত কয়েকটি বিভাগ। এইসব বিভাগের দায়িত্বে থাকতেন মন্ত্রীগণ। সম্রাটের পরেই ছিল ‘ভকিল’ বা প্রধান রূপরেখা মন্ত্রীর স্থান। তবে ভকিল বৈরাম খাঁ’র বিদ্রোহজনিত অভিজ্ঞতা থেকে আকবর ভকিলের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। ভকিল ছাড়া চারটি প্রধান দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন চার জন মন্ত্রী। এঁরা হলেন-
(১) দেওয়ান বা ওয়াজির
(২) মির বশি
(৩) মির সামান এবং 
(৪) সদর উসুদূর 


রাষ্ট্রের আয়ব্যয়, রাজস্বের হিসাব প্রভৃতি রাখার দায়িত্ব ছিল উজির বা দেওয়ান - এর হাতে। তিনি সম্রাটের সাথে পরামর্শক্রমে রাজ্যের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে আকবরের সময় উজিরের ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় সংকোচন করা হয়েছিল। অবশ্য উজির পদে কেবল সম্রাটের বিশ্বাসভাজন ও নিকটজনেরাই নিযুক্ত হতেন। ‘মির বশি’ ছিলেন সামরিক বিভাগের মন্ত্রী। পদমর্যাদায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি সামরিকবাহিনীর নিয়ােগ, বাতিল, বেতন প্রদান প্রভৃতি বিষয়ে সম্রাটকে পরামর্শ দিতেন এবং সম্রাটের অনুমােদনক্রমে কাজ চালাতেন।


সম্রাট কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে গেলে তিনি তাকে সঙ্গ দিতেন। সাম্রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা গুপ্তচরবাহিনী যেসব খবরাখবর সংগ্রহ করতেন, মির বশি গুরুত্ব অনুযায়ী সেগুলি সম্রাটের গােচরে আনতেন। পদমর্যাদা অনুসারে তৃতীয় মন্ত্রী ছিলেন ‘মির সামান’। সম্রাট, তার পরিবার-পরিজন বা সরকার পরিচালনার জন্য নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বণ্টনের ভার দিয়েছিলেন মির সামান -এর হাতে।


চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন সদর-উ-সুদূর। ইনি ছিলেন ইসলামধর্মীয় বিষয়াদি ও বিচারবিভাগের সর্বোচ্চ কর্মচারী। ইনি সম্রাটকে মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা শােনাতেন দাতব্যকর্ম পরিচালনা করতেন। ইনি প্রধান কাজি হিসেবে কার্যত বিচার পরিচালনা করতেন। ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে 'মাহজরনামা’ ঘােষণার পর এর কর্মদক্ষতা অনেক সংকুচিত হয়ে পড়ে। কারণ এই ঘােষণার দ্বারা সম্রাট স্বয়ং ইসলামি আইনের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকারীর ক্ষমতা বা সরকারি দানের ক্ষমতা অধিগ্রহণ করেন। প্রতিটি দপ্তরেই একাধিক সহকারী নিযুক্ত করা হত।

❏ প্রাদেশিক শাসন:-

শাসনের সুবিধার্থে আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১৫ টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। প্রথম সুবার সংখ্যা ছিল বারাে, পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় আঠারােতে। এ ছাড়া, তার অধীনে বহু স্বায়ত্তশাসিত সামন্তরাজ্য ছিল। প্রতিটি সুবায় প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন সুবাদার।

❏ স্থানীয় শাসন:- 

প্রতিটি সুবা কতকগুলি সরকার বা জেলায় বিভক্ত ছিল। ফৌজদার, আমালগুজার, বিতিচি, খাজনাদার, কোতােয়াল, কাজি প্রমুখ ছিলেন জেলায় প্রশাসনিক প্রধান। আইনশৃঙ্খলার তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যুদ্ধের প্রয়ােজনে সামরিক বাহিনী পরিচালনা করতেন। তিনি মূলত ছিলেন সামরিক কর্মচারী।

❏ রাজস্ব-শাসন:-

আকবরের আমলে সরকারি আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। রাজস্ব সংস্কারক রূপে আকবরের নাম বিশেষ উল্লেখযােগ্য। রাজস্ব সংস্কারে তিনি টোডরমল, শাহ মনসুর প্রভৃতি রাজস্ববিদদের সহযােগিতা লাভ করেছিলেন।


টোডরমলের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের রাজস্ব-শাসনের মূল নীতি নির্ধারিত হয়েছিল। এই ব্যবস্থা অনুসারে প্রথমে সমস্ত জমিকে জরিপের ব্যবস্থা করা হয়। অতঃপর উর্বরতা অনুসারে জমিগুলিকে চারভাগে বিভক্ত করা হয়। যেমন — পােলজ, পারাউতি, চাচর এবং ব্যঞ্জর। যে জমিতে প্রতি বছর ফসল উৎপাদন হত, তাকে বলা হত ‘পােলজ' 'পারাউতি' ছিল সেইসব জমি, যেগুলিকে উৎপাদনের পর দু-এক বছর পতিত রাখতে হত। তিন বা চার বছর অন্তর ফসল দেওয়া জমি ছিল ‘চাচর’ এবং পাঁচ বা আরও বেশি। বছর অন্তর ফসল হত যে জমিতে তাকে বলা হত 'ব্যঞ্জর’।

প্রথম তিন শ্রেণির জমিকে আবার উৎকৃষ্ট, মাঝারি এবং নিকৃষ্ট — এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হত। এই তিন শ্রেণির উৎপাদনের গড়ের এক-তৃতীয়াংশে রাজস্ব হিসেবে ধার্য করা হত। রাজস্ব উৎপন্ন ফসলে কিংবা নগদ অর্থে দেওয়া যেত। টোডরমলের এই ব্যবস্থা ‘জাবত’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। মুলতান, গুজরাট, বিহার, মালব ও রাজপুতানার একাংশে এই রাজস্ব-পদ্ধতি প্রচলিত ছিল।


‘জাব' - পদ্ধতি ছাড়াও ‘গল্লাবস ও নস্ক’ পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় করা হত। গল্লাব ব্যবস্থায় শস্যের একটি নির্দিষ্ট অংশ রাজস্বরূপে গৃহীত হত। সিন্ধু, কাশ্মীর ও কাবুলে এই ব্যবস্থা চালু ছিল। গাল্লাবস তিন রকমের ছিল, যেমন রসিবাটাই (শস্য কাটা পর ভাগাভাগি) , ক্ষেতবাটাই (বীজ বপনের পর জমি ভাগ) এবং ল্যাক্স বাটাই (উৎপাদিত শস্যের এক তৃতীয়াংশ)। 'নসক' পদ্ধতি অনেকটা জমিদারি ব্যবস্থার মতাে ছিল। মােটামুটি অনুমানের উপর নির্ভর করে একটা রাজস্ব নির্ধারণ করা হত। আধুনিক পণ্ডিতেরা 'নসক' পদ্ধতিকে কোনাে বিশেষ পদ্ধতি না বলে রাজস্বের পরিমাণ বলে অভিহিত করার পক্ষপাতী। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু ছিল।


❏ মনসবদার:- 

আকবরের শাসনব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ ছিল মনসবদারগণ। আকবর জায়গিরব্যবস্থা তুলে দিয়ে নগদ অর্থে বেতনের ব্যবস্থা করেন। মনসবদারগণ পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক অশ্বারােহী সৈন্য সরকারি খরচে রাখতেন এবং প্রয়ােজনে ওই বাহিনী নিয়ে সম্রাটকে সাহায্য করতেন। কেবল যােগ্যতার ভিত্তিতেই মনসবদার নিযুক্ত করা হত।

❏ নিরপেক্ষতা:- 

আকবরের শাসননীতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল সার্বিক নিরপেক্ষতা। ধর্ম বা জাতি বৈশিষ্ট্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে ছিল গুরুত্বহীন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য তিনি ন্যায়বিচার প্রণয়ন করতেন। শাসনপদে নিয়ােগের ক্ষেত্রেও কঠোর নিরপেক্ষতা অনুসরণ করতেন।

আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF

Previous Post Next Post