সুপ্রিয় বন্ধুরা,
Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল | Battle of Plassey Causes and Results in Bengali . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল | Battle of Plassey Causes and Results in Bengali।
পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল | Battle of Plassey Causes and Results in Bengali
❏ পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল:-
১৭৫৭ সালে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৭৩২-১৭৫৭) কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রের কারণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরই মূলত ভারতবর্ষে ইংরেজ-শাসনের সূচনা হয়েছিল।
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল সিরাজউদ্দৌলার দাদু আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর বাংলার মসনদে আরোহণ করেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে মসনদে বসেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই নবাব দেখেন চারিদিকে দেশীয় বণিক, বিশ্বাসঘাতক ও ইংরেজ বনিকদের চক্রান্ত। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন, পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাস্ত হন। ফলে ১৯০ বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।
পলাশীর যুদ্ধটি কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) উত্তরে এবং মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে, তৎকালীন বাংলার রাজধানী (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায়) হুগলী নদীর তীরে পলাশিতে সংঘটিত হয়েছিল। সেদিনই ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে উপমহাদেশের স্বাধীনতার কবর রচিত হয়েছিল।
১৯৫৭ সালের ২২ জুন, ব্রিটিশ বাহিনী ক্লাইভের নেতৃত্বে পলাশীর পথে যাত্রা করে। ইতোমধ্যে নবাব মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় ৬৫ হাজার সৈন্য নিয়ে রওয়ানা দেন এবং শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য পলাশীতে শিবির স্থাপন করেন।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সকাল ৮টার দিকে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। মীর মর্দান, মোহন লাল, খাজা আব্দুল হাদী খান, নব সিং হাজারী প্রমুখের অধীন নবাবের সেনা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালায়। অন্যদিকে মীরজাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভ এর অধীনে নবাবের প্রায় ৪৫ হাজার সেনা নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ও পরিস্থিতি অবলোকন করে।
শুরুতে, মীর মর্দান ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তার প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ তার সেনাবাহিনী নিয়ে আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। মীর মর্দান ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলেন।
কিন্তু মীর জাফর, ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সিরাজউদ্দৌলার গোলাবারুদ ভিজে যায়। তবুও, সাহসী মীর মর্দান এবং সেনাপতি মোহন লাল ইংরেজদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গোলার আঘাতে মীর মর্দান মারাত্মকভাবে আহত হন ও মারা যান।
পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্র গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফর ও রায় দুর্লভকে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু উভয় সেনাপতি তার নির্দেশ অমান্য করেন। তাদের যুক্তি ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া অগ্রসর হওয়া আত্মঘাতী হয়।
কিন্তু কোম্পানি ও নবাবের বাহিনীর মধ্যে তখন দূরত্ব মাত্র কয়েকশত গজ। বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহন লাল নবাবকে পরামর্শ দেন যুদ্ধবিরতি ঘটলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সিরাজ মীর জাফর প্রমুখের পরামর্শে পশ্চাৎপসরণের সিদ্ধান্ত নেন।
পলাশির যুদ্ধে ৫০,০০০ সৈন্য, ৪০টি কামান এবং ১০টি যুদ্ধ হাতি নিয়ে সিরাজ-উদ-দৌলার সেনাবাহিনী রবার্ট ক্লাইভের ৩,০০০ সৈন্যের কাছে পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধ ১১ ঘন্টার মধ্যে শেষ হয় এবং সিরাজ-উদ-দৌলা তার পরাজয়ের পর যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যান।
রবার্ট ক্লাইভের মতে, ব্রিটিশ সৈন্য ২২ জন মারা গিয়েছিল এবং ৫০ জন আহত হয়েছিল। নবাব বাহিনী প্রায় ৫০০ জন লোককে হারিয়েছিল, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছিল।
❏ পলাশির যুদ্ধের কারণ:
(1) সিরাজুদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে আহরণের পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজরা নতুন নবাবকে কোনো উপটৌকন না পাঠানো এবং তাঁর সঙ্গে সৌজন্য মুলক সাক্ষ্যৎ না করা।
(2) নবাবের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ।
(3) নবাব দত্ত্ব্বকের অপব্যবহার নিষেধ করার সত্ত্বেও কোম্পানির নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করা।
(4) কোম্পানি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা ও জনগণের উপর ইংরেজদের নির্যাতন করা।
(5) ইংরেজদের একের পর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অবাধ্যতা।
(6) নবাব কর্তৃক ব্রিটিশদের দেওয়া বাণিজ্য সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার।
(7) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শ্রমিকদের কর ও শুল্ক পরিশোধ না করা।
(8) ব্রিটিশদের দ্বারা নবাবকে বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্ত করা।
❏ পলাশির যুদ্ধের ফলাফল:-
(1) এই যুদ্ধের ফলে বাংলায় প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের পথ সুগম হয়।
(2) পলাশির যুদ্ধের পর মীরজাফর বাংলার নবাব হিসাবে মুকুট লাভ করেন।
(3) পলাশীর যুদ্ধের ফলে ফরাসি বাহিনীর অবসান ঘটে। ফরাসীরা ভারত থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়।
(4) ইংরেজ অফিসাররা মীর কাসিমকে বাংলার নবাব হিসেবে বসায়।
(5) ইংরেজরা বাংলায় ইউরোপীয় শক্তিতে পরিণত হয়।
(6) পলাশির যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভকে "লর্ড ক্লাইভ" উপাধি দেওয়া হয়।
(7) ভারতের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(8) ব্রিটিশরা কর আদায়ের নামে বাংলার অধিবাসীদের ওপর কঠোর নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দিতে থাকে।
(9) যুদ্ধের ফলে মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসালেও তিনি ছিলেন নামে মাত্র নবাব, প্রকৃত ক্ষমতা ছিল রবার্ট ক্লাইভের অধিনে।
(10) পলাশী যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে।
(11) এ যুদ্ধের পর ইংরেজ শক্তির স্বার্থে এদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে।
(12) পলাশী যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী পরিণতি ছিল সমগ্র উপমহাদেশে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা। এভাবেই এ যুদ্ধের ফলে বাংলার তথা ভারতের স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF