সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era

সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era
সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era

সুপ্রিয় বন্ধুরা,

Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era।




সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন | Bhakti Movement of the Sultanate Era

❏ সুলতানি যুগের ভক্তি আন্দোলন (Bhakti Movement of the Sultanate Era):- ভক্তি আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন কবীর, রামানন্দ, নামদেব ও শ্রীচৈতন্য। এঁরা সকলেই ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সমন্বয়ের কথা প্রচার করেন। তাঁরা ভক্তিকেই ধর্মীয় উপাসনার পন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

❏ (১) রামানন্দ: সুলতানি আমলে উত্তর ভারতে ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন রামানন্দ। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে ভক্তি আন্দোলনের সেতু রচনা করেন। প্রয়াগে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। “শ্রীরামচন্দ্রই ঈশ্বর — তাঁর প্রতি অবিচল ভক্তিই মানুষকে মুক্তির পথ দেখাবে” —এই ছিল রামানন্দের বাণী। তিনি জাতিভেদ মানতেন না। হিন্দু সমাজের ধর্মীয় আড়ম্বর ও নিরর্থক আচার-অনুষ্ঠানের তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন।

❏ (২) কবীর: রামানন্দের শিষ্য কবীর ছিলেন মধ্যযুগে ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সাধক। জ্ঞাতসারে তিনিই প্রথম হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে মিলনের আহ্বান জানান। ধর্মের কোনোরকম বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান তিনি মানতেন না। জাতিভেদ, মূর্তিপূজা ও নমাজ পড়ার তিনি তীব্র বিরোধী ছিলেন। কবীরের মতে, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন। অন্তরের ভক্তি ও অনুরাগের মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। কবীর তাঁর উপদেশগুলি হিন্দিতে ছোটো ছোটো কবিতা বা ‘দোঁহার’মাধ্যমে প্রচার করেন। এই দোঁহাগুলির মাধ্যমে তিনি ধর্মের বহু জটিল তত্ত্ব অত্যন্ত সহজ ও সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। ডঃ তারাচাঁদের মতে, ‘সর্বধর্ম সমন্বয় ও মানব প্রেমের বাণী প্রচারই ছিল কবিরের লক্ষ'।

❏ (৩) নানক (১৪৬৯-১৫৩৮): ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক। কবীরের মতো নানকও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এছাড়া, ধর্মের জটিল আচার থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করাই ছিল তাঁর ধর্মমতের মূল বাণী। তিনি মূর্তিপূজা, জাতিভেদ প্রথা, তীর্থযাত্রা প্রভৃতি ধর্মীয় আড়ম্বরের বিরোধী ছিলেন। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ দূর করে সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন করাই তাঁর জীবনের ব্রত ছিল। নানকের শিষ্যরা ‘শিখ’ নামে পরিচিত। ‘শিখ’ কথাটির অর্থ হল ‘শিষ্য’। নানকের উপদেশ ‘ গ্রন্থ সাহেব ’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। 

(৪) নামদেব:- নামদেব খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের প্রথমদিকে মারাঠী সন্ত (সাধু) নামদেব মহারাষ্ট্রে ভক্তিবাদের প্রচার করেন। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং মূর্তিপূজা ও ধর্মের বাহ্যিক অনুষ্ঠানের ঘোর বিরোধী। নামদেবের ধর্মমতের মূল কথা ছিল অন্তরের শুচিতা, ঈশ্বরে ঐকান্তিক ভক্তি ও ‘হরি’র গুণকীর্তন। তিনি মারাঠী ভাষায় অনেক কবিতা লিখে গেছেন।

❏ (৫) শ্রীচৈতন্যদেব: এই সময় পর্বে উত্তর - পূর্ব ভারতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে ভক্তিবাদের তথা বৈষ্মবধর্মের বিকাশ হয়। বৈষ্ণবধর্ম প্রচারকদের মধ্যে চৈতন্যদেব ছিলেন অন্যতম। শ্রীচৈতন্য বিশ্বাস করতেন যে, নাম গানের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরলাভ করা যায়। চৈতন্যের ধর্মমতের মূল কথা ছিল — বৈরাগ্য, জীবে দয়া ও শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি ঐকান্তিক প্রেম।
তিনি জাতিভেদ ও বর্ণভেদ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি অহিংসা পরম ধর্ম বলে মনে করতেন। জাতিধর্মনির্বিশেষে সব মানুষের সমানাধিকারের বাণী তিনি প্রচার করেন। যবন হরিদাস ছিলেন চৈতন্যের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ ও উড়িষ্যায় তাঁর ধর্মের বাণী গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুকুমার সেন চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনকে “বাঙালি জাতির প্রথম জাগরণ” বলে অভিহিত করেছেন। আজও তিনি শ্রীকৃষ্ণের অবতার হিসাবে পূজিত হচ্ছেন।

❏ (৬) বল্লভাচার্য: ভক্তিবাদের আর-এক প্রবক্তা ছিলেন বল্লভাচার্য। তিনি ছিলেন কৃষ্ণের উপাসক ও জাতি ভেদাভেদের তীব্র বিরোধী। কৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করাই ছিল তাঁর আদর্শের মূল কথা।

❏ (৭) মীরাবাঈ: মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের এক স্মরণীয় নাম হল মীরাবাঈ। তিনি ছিলেন গায়িকা ও সাধিকা এবং কৃষ্ণভক্ত। মেবারের রাজপরিবারে বিবাহ হলেও, মীরা অবিরত সাধুসঙ্গ ও কীর্তনে বিভোর থাকতেন। এই যুগেই মীরার পদাবলী রচিত হয়। শেষে তিনি মেবার ত্যাগ করে বৃন্দাবন হয়ে দ্বারকায় আসেন। সংগীত বা ভজনের মধ্যে দিয়েই কৃষ্ণ তথা ঈশ্বর লাভ করা যায়, এই ছিল তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। তাঁর পদাবলীর ভাষা রাজস্থানী, যদিও তাতে গুজরাটি, হিন্দি ও ব্রজভাষার অনেক শব্দ সংযোজিত দেখা যায়।

❏ (৮) সুরদাস: মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের আর এক স্মরণীয় নাম হল সুরদাস। তিনিও ছিলেন কৃষ্ণ ভক্ত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভক্তিগীতি বা ভজনের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর লাভ করা যায়। তাঁর রচিত ভজনগুলো হল হিন্দি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

❏ (৯) দাদু: মধ্যযুগের আর-এক খ্যাতনামা সাধক ছিলেন দাদৃ। হিন্দু ও মুসলমানদের অনেকেই দাদূর শিষ্য ছিলেন। তিনি প্রায় সারা ভারত পরিক্রমা করে সব ধর্মের অন্তর্নিহিত নিগূঢ় ঐক্যটি আবিষ্কার করেন। জাতি, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিই যে সাধনার বাধা ও ধর্মের অন্তরায়, তা তিনি সকলকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি একথাই প্রচার করেন, “আমি হিন্দু নই, মুসলমানও নই; আমি পরম করুণাময় ঈশ্বরকেই ভালোবাসি।”

❏ ভক্তি আন্দোলনের ফলাফল:

(১) ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা ও ব্যভিচারের পরিবর্তে মানুষ সহজ সরল জীবন যাত্রায় প্রভাবিত হয়। ভক্তি আন্দোলন একদিকে যেমন হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি, অস্পৃশ্যতা, ব্যভিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিয়োজিত হয়েছিল, অন্যদিকে ভক্তি আন্দোলনের ফলে হিন্দু সমাজের সংহতি ও ঐক্য বজায় থাকে।

(২) হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন: ভক্তি আন্দোলনের ফলে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ ও বিবাদের অবসান ঘটে এবং সাময়িকভাবে সমন্বয় সাধিত হয়।

(৩) সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশ: ভক্তি আন্দোলনের ফলে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও বিকাশ ঘটেছিল। রামানন্দ ও কবীরের রচনা হিন্দি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে। চৈতন্যদেবের শিষ্যগণ বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন। নানকের রচনার দ্বারা পাঞ্জাবি ভাষা সমৃদ্ধিলাভ করে। মহারাষ্ট্রেও গুরু নামদেব -এর অবদানে মারাঠি সাহিত্য পরিপুষ্ট হয়।

(৪) জাতিভেদ প্রথার অবসানের প্রচেষ্টা: ভক্তি আন্দোলনের মানবতাবাদী সাধু-সন্তরা হিন্দুদের বর্ণভেদ-প্রথার বিশেষ কিছু পরিবর্তন করতে না পারলেও তাঁরা বর্ণভেদ-প্রথার কঠোরতা কিছুটা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

(৫) নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি: ভক্তিবাদীরা ধর্মপালনে স্ত্রী-পুরুষের ভেদাভেদ মানতেন না। তার ফলে সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং মেয়েরা ধর্ম সভায় যোগদানের অধিকার ফিরে পান।

আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF

Post a Comment

Previous Post Next Post