প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies

প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies
প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies

সুপ্রিয় বন্ধুরা,

Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies।




প্রবন্ধ রচনা- পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার | Environmental Pollution and Remedies

❏ ভূমিকা:- পরিবেশদূষণ আধুনিক বিশ্বের এক অগ্নিগর্ভ বিষয়। যন্ত্র সভ্যতার বিষবাষ্পে দিশাহারা মানুষের এখন একটাই প্রার্থনা— ‘বাঁচো এবং বাঁচাও।' একসময় মানুষ সবুজ পৃথিবী-মায়ের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করেছ। কিন্তু আজ সেই পরিবেশ দূষণের অক্টোপাশে বন্দি। এই সুন্দর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তিনভাবে–


(১) প্রাকৃতিক দূষণ;
(২) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ;
(৩) মানসিক দূষণ;

আগামী দিনে মানুষকে পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, মানুষকে বাঁচতে হলে এই পরিবেশদূষণ প্রতিকারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।


❏ পরিবেশদূষণের ইতিহাস:- আদিম মানুষ অতীতে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলত বলে সেদিনের পরিবেশ তাদের কাছে ছিল বসবাসের উপযুক্ত। অনুর্বর মাটিকে উর্বর করে তাতে তারা ফলিয়েছে সোনার ফসল। নদী কিংবা ঝরনার জল মানুষ অনায়াসে পান করেছে। সেদিন প্রকৃতির বাতাসও ছিল পবিত্র। কিন্তু যেদিন মানুষ পাথরে পাথরে ঘষা লাগিয়ে আগুন জ্বালাতে শিখেছে সেদিন থেকে পরিবেশেদূষণের জয়যাত্রা শুরু। পরিবেশের ওপর এভাবে মানুষ যতই অত্যাচার করতে থাকল, ততই দূষণের-যাত্রা পথ প্রশস্ত হতে থাকল। উত্তরাধিকার সূত্রে সেই পাপের ভাগীদার আজ আধুনিক মানুষ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যতই উন্নত হচ্ছে ততই বাড়ছে দূষণের অভিশাপ। বর্তমানে এই পরিবেশ-ভাবনা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়।


❏ প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশদূষণ:- পরিবেশদূষণের অন্যতম প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-

(ক) জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজনের তাগিদে জল, মাটি, বায়ুর ওপর পড়ছে প্রচণ্ড চাহিদার চাপ। ফলে অরণ্যসম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ হচ্ছে বিপুল ক্ষতির প্রচণ্ড সম্মুখীন।

(খ) বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা। প্রতিদিন কারখানার বর্জ্য পদার্থ, গৃহদের বাড়ির আবর্জনা, কীটনাশক, রাসায়নিক পদার্থ —নদীবক্ষে ও দীঘিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নেই জল বাহিত দূষিত পদার্থ আমাদের শরীরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়মিত প্রবেশ করে চলেছে।

(গ) কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, উনুনের ধোঁয়া, খনিজ তৈল চালিত যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া — পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। কার্বন

(ঘ) বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকা সালফার, নাইট্রোজেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, CO2, মনোক্সাইড, পারমাণবিক বিস্ফোরণ বায়ুমণ্ডলকে ভয়ংকরভাবে দূষিত করে চলেছে।

(ঙ) খনি থেকে কয়লা, খনিজ তৈল ইত্যাদি উত্তোলনের সময় এবং বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয়, ভূদূষণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

❏ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ:- বিশ্বের সব দেশে গ্রাম ও শহরের অধিবাসীদের মধ্যে জীবনযাত্রার পার্থক্য সুস্পষ্ট। গ্রামীণ সমাজে আজও সুখে-দুঃখে, উৎসবে-আনন্দে মানুষে মানুষে প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক থাকলেও সেখানে আন্তরিকতার দিক ক্রমাগত লোপ পাচ্ছে। শহরের বুকে মানুষ ইঁদুরদৌড় দৌড়োতে দৌড়োতে একাকী ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে ক্রমাগত। সমাজে ধনী-দরিদ্রের পাল্লা আজও মানুষকে দুঃসম্পর্কের চরম সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক জগতেও প্রবেশ করেছে অপসংস্কৃতি। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ হারিয়েছে মূল্যবোধ। রুচিহীন আমোদ- প্রমোদ, অশ্লীল সাহিত্য, অশালীন ছায়াছবি আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশকে সম্পূর্ণ গ্রাস করতে চলেছে। দলীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের বিবেকহীনতা আজকের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করে তুলছে। বর্তমানের পবিত্র শিক্ষায়তনগুলি পর্যবসিত হচ্ছে রাজনৈতিক দলের আখড়ায়। সাংস্কৃতিক পরিবেশে এই দূষণের কারণে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়ছে দিনে দিনে।


❏ মানসিক দূষণ:- বর্তমান সমাজে মানসিক দূষণ সুস্থ পরিবেশ গঠনের আর-এক অন্তরায়। বর্তমান প্রজন্মের শিশু পায় না বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিমণ্ডল। তারা পায় না স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠার মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় অপরাধপ্রবণতা। এ থেকে তারা নির্জনতার দিকে অগ্রসর হয় এবং মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যুবসম্প্রদায় সমাজের গড্ডলিকা স্রোতে গা ভাসিয়ে সর্বনাশের পথ ধরে এগিয়ে চলে । না পাওয়ার বেদনা, হতাশার বেদনা তাদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। বাড়ির বড়োরা, এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা একান্ত আপনজন খুঁজে পায় না কথা বলার জন্য। সমাজে কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে এবং পরিণাম ‘সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখে।

❏ পরিবেশ রক্ষার উপায়:-

(১) প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার স্বপ্নে পরিবেশপ্রেমী সচেতন মানুষকে নবচেতনালোকের জোয়ারে জেগে উঠতে হবে।

(২) পরিবাবের আদর্শ, রুচিবোধ, মানসিকতার ঊর্ধ্বে, মনের বিকাশের দিকে প্রত্যেককে নজর দিতে হবে।

(৩) যুবসমাজকে অপসংস্কৃতির পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

(৪) সমাজে শিশুপাঠ্য লাইব্রেরি ও পূর্ণাঙ্গ পাঠাগার প্রকল্প বেশি করে গড়ে তুলতে হবে।

(৫) নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা, সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে প্রত্যেককে সচেতন করতে হবে।

(৬) উপযুক্ত দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

❏ উপসংহার:- জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে ও পরিবেশকে রক্ষা করতে না পারলে প্রত্যেকের জীবন নেমে আসবে মৃত্যুর কালো মেঘ। সুস্থ পরিবেশ দেয় সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি। তাই প্রকৃতি, পরিবার, শিক্ষাক্ষেত্র এমনকি সমাজ — সর্বত্রই পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা দরকার। ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে’ তুলতে শুধু কবি - শিল্পীরা নয়, আমাদের সকলকেই ‘দৃঢ় অঙ্গীকার’ করতে হবে।

আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF

Previous Post Next Post