সুপ্রিয় বন্ধুরা,
Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি প্রাচীন ভারতের প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ সমূহ | Reasons for the Protest Movement . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে প্রাচীন ভারতের প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ সমূহ | Reasons for the Protest Movement।
প্রাচীন ভারতের প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ সমূহ | Reasons for the Protest Movement
❏ প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ সমূহ (Reasons for the Protest Movement):-
বৈদিক যুগের শেষের দিকে, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রচলিত সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক জটিলতা, রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও যজ্ঞকেন্দ্রিক ধর্মমতের বিরুদ্ধে যে যুগোপযোগী ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে, তা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রতিবাদী আন্দোলন নামে খ্যাত। এই সময় ভারতে নাস্তিক ও আস্তিক ধারায় প্রায় ৬৩ টি ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে, এর মধ্যে বিশেষ করে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
■ প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ :
■ [১] ধর্মীয় কারণ : বৈদিক যুগের শেষ ভাগে যাগযজ্ঞ, আড়ম্বর ও পশুবলি ধর্মানুষ্ঠানের প্রধান অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এযুগে যাগযজ্ঞ ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আচারসর্বস্ব ও সময়সাপেক্ষ। এরফলে, মূলত আর্থসামাজিক প্রশ্নেই সাধারণ মানুষ ক্রমশ এই ধর্মের প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। এছাড়া বৈদিক যাগযজ্ঞের অন্যতম অঙ্গ ছিল আহুতি বা পশুবলি। ক্রমবর্ধমান পশুহত্যার ফলে গো সম্পদ কমে যাওয়ায় দেশের কৃষি ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই অবস্থায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রবক্তারা অহিংসা, জীবে দয়া প্রভৃতি আদর্শ প্রচার করলে তা বহুজনের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এর যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় ঐতিহাসিক ওডেনবার্গ -এর এই মন্তব্যে, ‘বুদ্ধের আবির্ভাবের শত শত বছর আগেই ভারতীয় চিন্তাধারায় এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, যা বৌদ্ধধর্মের পথ রচনা করে'।
■ [২] সামাজিক কারণ : জটিল ও বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা : বৈদিক যুগের শেষের দিকে জাতিভেদ প্রথা সমাজে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তুলেছিল।
প্রথমত, এই সময়ে আর্য সমাজব্রাত্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র – এই চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মজীবনে ব্রাত্মণদের অবস্থান ছিল শীর্ষে এবং তাঁরা সমাজে বিশেষ সুযোগ সুবিধার অধিকারী ছিলেন। ক্ষত্রিয়রা শাসক শ্রেণির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলেও সামাজিক দিক থেকে তাঁরা ব্রাত্মণদের সমান ছিলেন না। বৈশ্যদের হাতে অর্থ থাকলেও তাদের তেমন সামাজিক মর্যাদা ছিল না। সমাজে শূদ্রের স্থান ছিল ভৃত্যের মত। ক্রমশ ব্রাক্ষ্মণ বাদে সমাজের অন্যান্য শ্রেণিরা ব্রাহ্মণদের মতো মর্যাদা ও অধিকারের দাবিদার হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে বৌদ্ধ শ্রমণরা জাতিভেদহীন সমাজের কথা প্রচার করলে জনসাধারণের অনেকেই এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ত, বৈদিকযুগের শেষ দিকে সমাজে নারীদের মর্যাদা অনেকাংশে কমে যায়। আগের মতো তারা যুদ্ধবিদ্যা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারতেন না। এছাড়া বাল্য বিবাহ এবং বহু . বিবাহ প্রথা সে যুগের নারীসমাজকে দুর্বল করে তোলে। অপর পক্ষে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম যুগে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হত । স্বাভাবিক কারণেই নারীসমাজ বৌদ্ধধর্মের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
■ [৩] ভাষাগত কারণ : বৈদিক আর্যদের প্রধান ভাষা ছিল সংস্কৃত / কিন্তু এই ভাষা সাধারণ মানুষের জটিল ও দুর্বোধ্য ছিল। অপর দিকে, বুদ্ধদেব পালিভাষায় ধর্ম প্রচার করতেন, যা ছিল সর্বসাধারণের সহজবোধ্য।
■ [৪] অর্থনৈতিক কারণ : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কৃষির উন্নতির সাথে সাথে ব্যাবসাবাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। কিন্তু বৈদিক ব্রাক্ষ্মণরা সমুদ্রযাত্রা, সুদের কারবার প্রভৃতির ওপর নানান রকম ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধধর্মে এইসব বিষয়ের ওপর কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। এছাড়াও জৈন ও বৌদ্ধধর্মের অহিংসার আদর্শ এবং যুদ্ধের অপ্রয়োজনীয়তা' সম্পর্কীত প্রচারব্যবস্থা বাণিজ্যবিকাশের বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। এই জন্যই বৈশ্যরা বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। বৈদিক যুগের শেষের দিকে লোহার আবিষ্কারের ফলে কৃষি, শিল্প এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে ব্যাপক ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হলে আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে বঞ্চিত মানুষ প্রকৃত সুখের পথ খুঁজতে থাকে।
এই সংকট থেকে মুক্তি লাভের জন্য জৈন ও বৌদ্ধধর্মে অত্যধিক ভোগবিলাস এবং সন্ন্যাস জীবনের পরিবর্তে মধ্যপন্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার বলেছেন যে, ‘এই সময় আর্থসামাজিক জীবনের পরিবর্তনের ফলে ধর্মীয় জীবনেও পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
■ [৫] রাজনৈতিক কারণ : এই সময়ে রাজার চরম আধিপত্য এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতা জনচেতনার স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে। অপরদিকে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মে রাজতান্ত্রিক আদর্শের বদলে গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শের প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ধর্ম সংঘগুলি ছিল এক একটি ছোটো ছোটো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান।
■ [৬] দার্শনিক চিন্তাভাবনা : বৈদিক ধর্মমতের প্রচলিত ভ্রান্তনীতির পরিবর্তে এযুগে বুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটে। এর ফলস্বরূপ এই সময়ে জন্মান্তর, কর্মফল তত্ত্ব প্রভৃতি ধারণাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, সকল মানুষকেই কর্মফল ভোগ করতে হবে। এমনকি যাগযজ্ঞ মানুষকে জন্মমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শুদ্ধতা যা বৌদ্ধধর্মে বারংবার বলা হয়েছে। ইউরোপে যেমন ক্যাথলিক ধর্ম ও পোপের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের উৎপত্তি য়েছিল, তেমনি ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৈদিক ধর্ম ও ব্রাক্ষ্মণদের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্ম হিসেবে জৈন ও বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব হয়। সে কারণেই স্বামী বিবেকানন্দ বৌদ্ধধর্মকে 'Rebel child of Hinduism' বলে অভিহিত করেছেন। পরবর্তীকালে এই ধর্ম ভারত তথা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রসার লাভ করে।
আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF
