সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali

সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali
সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali

সুপ্রিয় বন্ধুরা,

Wellcome to www.ajjkal.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ নিয়ে এসেছি সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali . প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার যেমন WBP | WBTET | WBCS | SSC | TET | WBPSC | Food SI | BANK EXAM | All Jobs Exam | রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা | স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি পত্র আপনাদের বিনামূল্যে দিয়ে এসেছি। তাই www.ajjkal.com আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali।




সৈয়দ মুজতবা আলি | Syed Mujtaba Ali Biography in Bengali

❏ ভূমিকা:-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে যখন ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল, তখন সেই খণ্ডনের সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছিল অনেক কিছুই। কিন্তু যা হারিয়ে যায়নি তা হল অখন্ড ভারতবর্ষের ঐতিহ্যশালী সংস্কৃতি। সাতচল্লিশের দেশভাগের কোপ উপমহাদেশের যে অংশগুলির উপর পড়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো অখন্ড বাংলা প্রদেশ।

এই বাংলা প্রদেশ ভেঙে দু টুকরো করে গঠিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ। এই দুই বাংলার ধর্মগত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্থক্য থাকলেও পার্থক্য নেই দুই বাংলার সংস্কৃতিতে, সাহিত্যচর্চায় ও মননে। দেশভাগের মতন করুন হৃদয়বিদারক ঘটনাও এই ঐক্যতানে ছেদ ঘটাতে পারেনি।

দুই বাংলার স্বতন্ত্র নিজস্ব এই সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চা যাদের হাত ধরে বেঁচে থাকে তারা হলেন এই দুই অঞ্চলের রুচিশীল সংস্কৃতিবান মানুষ। যুগে যুগে বাংলার ভূমিতে এমন মানুষের কোনদিন অভাব ঘটে নি। এদের মধ্যেই কিছু উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বাংলার সংস্কৃতি চর্চার আকাশ আলোকিত করেছেন যুগে যুগে। তেমনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলির মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

❏ জন্ম পরিচয়:-

সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতবর্ষের অন্তর্গত আসাম প্রদেশে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই শ্রীহট্ট জেলা বর্তমানে সিলেট নামে অধুনা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত।

তার পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি করতেন। এই আলী পরিবারের পৈতৃক নিবাস ছিল হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। এইখান থেকেই সময়ের সাথে সাথে কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন তার পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

❏ প্রাথমিক শিক্ষা জীবন:-

সৈয়দ মুজতবা আলীর শিক্ষাজীবন অত্যন্ত বর্ণময়। জীবনের শুরুতে ছেলেবেলায় তিনি তার জন্মস্থান সিলেটেরই একটি গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নিজের শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এইখানে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পিতা সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে বদলির চাকরি করার কারণে তার এর পরবর্তী শিক্ষাজীবন কেটেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

অবশেষে শেষ পর্যন্ত তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বোলপুরের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেই পাঁচ বছর পড়াশোনা করে ১৯২৬ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অভিনব পরিবেশের দরুন তিনি এখানে বহু ভাষা শেখার সুযোগ পান।

মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি বিধুশেখর শাস্ত্রীর কাছে শেখেন সংস্কৃত ভাষা তথা সাংখ্য ও বেদান্ত দর্শন, ডক্টর মার্ক কলিন্স ও মরিসের কাছে তিনি অধ্যয়ন করেন ইংরেজি ফরাসি ও জার্মান ভাষা এবং তুচ্চির কাছে শেখেন ইতালিয়ান ভাষা। এই সময়ে তিনি একই সাথে হিন্দি এবং গুজরাটি ভাষাও শিখে নেন। এছাড়া বাল্যকালে পারিবারিক সূত্রে মুজতবা আলী উর্দু ভাষার সঙ্গেও পরিচিত ছিলেন। 

❏ উচ্চশিক্ষা ও বিদেশযাত্রা:-

তৎকালীন সময়ে বিশ্বভারতীর স্নাতক ডিগ্রী দেশের অন্য কোথাও গৃহীত না হওয়ার কারণে সৈয়দ মুজতবা আলী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আই.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯২৯ সাল নাগাদ হুমবোল্ট বৃত্তি নিয়ে জার্মানি গিয়ে তিনি বার্লিন এবং বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

১৯৩২ সালে দর্শন বিভাগের তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করে তিনি লাভ করেন ডি.ফিল ডিগ্রী। সকল প্রকার পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী এবং মেধাবী সৈয়দ মুস্তাফা আলী এরপর ১৯৩৪ সাল নাগাদ মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। 

❏ কর্মজীবন:-

শিক্ষা জীবনের মতই সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্মজীবনও ছিল বর্ণময়। তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯২৭ সালে বর্তমান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কৃষি বিজ্ঞান কলেজের ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার অধ্যাপক হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে তিনি সেখানকার শিক্ষা দপ্তরের একজন অধিকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এরপর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারতবর্ষে বরোদার মহারাজার অনুরোধে মুজতবা আলী বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এইখানে তিনি দীর্ঘ আট বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লির শিক্ষামন্ত্রণালয় যোগ দেন। এরপর দেশভাগের প্রাক্কালে তিনি ফিরে যান পূর্ব পাকিস্তানে।

১৯৪৯ সাল নাগাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি পুনরায় তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বেশ কিছুদিন সৈয়দ মুজতবা আলী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অস্থায়ী অধ্যাপকের পদও অলংকৃত করেছিলেন।

বর্ণময় চরিত্রের এই মানুষটি ভারতে আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। সবশেষে কর্মজীবনের সায়াহ্নে তিনি পুনরায় তার প্রানের প্রিয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। অবশেষে ১৯৬৫ সাল নাগাদ কর্ম জীবন থেকে সৈয়দ মুস্তাফা আলী অবসর গ্রহণ করেন।

❏ ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা:-

বর্ণময় কর্মজীবনের সূত্রে বিভিন্ন দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও মাতৃভাষার প্রতি সৈয়দ মুজতবা আলী তান বরাবরই অক্ষুন্ন ছিল। সেজন্য ভারতবর্ষ ভাগ হবার পর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগণের ওপর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন তিনি আপন মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য গর্জে উঠেছিলেন।

বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি সর্বপ্রথম যে কয়েকজন মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে থেকে উঠেছিল মুজতবা আলী তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সদ্য জন্মলব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের সিলেটে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অধিবেশনে ১৯৪৭ সালের ৩০শে নভেম্বর তিনি এই দাবি উত্থাপন করেন।

আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ১৯৪৮ সালে মুজতবা আলী “দ্যা স্পিড ল্যাঙ্গুয়েজ অব ইস্ট পাকিস্তান” নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। এই প্রবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার চতুরঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

প্রবন্ধটিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী জনগণের ভাষার অধিকার সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক দাবিগুলি বিশদে আলোচিত হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু পৃষ্ঠপোষক সরকার এই প্রবন্ধটি লেখার কারণে সৈয়দ মুজতবা আলিকে শোকজ করলে তিনি অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দিয়ে ভারতবর্ষের কলকাতায় চলে আসেন।

❏ সাহিত্যকর্ম এবং অন্যান্য সৃষ্টি:-

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য পথিকৃত হিসেবে সৈয়দ মুজতবা আলী একাধারে ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন ঔপন্যাসিক, রম্যরচয়িতা, ছোটগল্পকার, অনুবাদক তথা বহুভাষাবিদ। আপন মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, আরবি, সংস্কৃত, উর্দু ইত্যাদি আরো ১৪ টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এই কারণেই তিনি অনুবাদক হিসেবে সকল ভাষা সাহিত্যের জন্য বিশেষ অবদান রেখে যেতে পেরেছেন।

প্রকৃতপক্ষে সৈয়দ মুজতবা আলির সাহিত্য রচনার জীবন শুরু হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন। সেইখানে তিনি হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশ করতেন। পরবর্তীকালে প্রিয়দর্শী, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, সত্যপীর প্রভৃতি নানা ছদ্মনামে তার বিভিন্ন লেখা বিভিন্ন বিখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই সকল পত্রিকা গুলির মধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকা, সত্যযুগ, বসুমতি, দেশ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নিজস্ব প্রতিভাবলে তিনি তার নিজস্ব স্বতন্ত্র একটি বিশেষ রচনাশৈলীর উদ্ভাবন করেন। তাছাড়া কর্মসূত্রে দেশে বিদেশে ভ্রমণ এর ফলে তার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে তিনি একের পর এক রচনা করেছেন বিভিন্ন ভ্রমণ কাহিনী। এছাড়া তাঁর রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উপন্যাস, ছোটগল্প এবং রম্য রচনা। কারোর কারোর মতে সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন পঞ্চাশের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক।

অতি সরল ভাষায় আড্ডার ঢঙে কথা বলার ছলে লেখনশৈলী তার এই জনপ্রিয়তার অন্যতম একটি কারণ। তার বড় ভাই মুর্তজা আলীর কথায় মুজতবা আলীর রচনায় কোন প্রকার ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না। সব মিলিয়ে তার রচিত মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০। তাঁর রচনাগুলির মধ্যে জলে ডাঙায়, পঞ্চতন্ত্র, শবনম, ধূপছায়া, কর্নেল ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

❏ প্রাপ্ত সম্মান এবং পুরস্কারসমূহ:-

জীবনের মহান কীর্তির জন্য জীবদ্দশায় তথা মৃত্যুর পরেও সৈয়দ মুজতবা আলী বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৪৯ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি নরসিংহ দাস পুরস্কার লাভ করেন। এরপর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের তরফ থেকে তিনি লাভ করেন আনন্দ পুরস্কার। তাছাড়া সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার কারণে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার মুজতবা আলীকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

❏ উপসংহার:-

১৯৭৪ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ৬৯ বছর বয়সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে বাংলা সংস্কৃতির উজ্জ্বল এই জ্যোতিষ্কের জীবনাবসান ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এই সকল মহান ব্যক্তিবর্গের কোনদিনই মৃত্যু হয় না। তারা বেঁচে থাকেন তাদের সৃষ্টিতে, সাহিত্যে, মতাদর্শে ও চিন্তায়। সৈয়দ মুজতবা আলীর উদারনৈতিক মতাদর্শ তথা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে চিত্রিত তার বিভিন্ন অমর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তিনিও চিরকাল আপামর বাঙালির হৃদয়পটে অমর হয়ে থাকবেন।

আরও পড়ুন:- 1000 জেনারেল নলেজ প্রশ্ন উত্তর PDF

Previous Post Next Post